গ্রীষ্মকাল মানেই অতিরিক্ত ঘাম, ধুলাবালি, রোদ ও তাপ। যা থেকে ত্বকের পাশাপাশি চুলের অবস্থাও নাজেহাল হয়ে পড়ে। গরমে মাথার ত্বক ঘেমে যায়, ফলে সেবাম উৎপাদন বেড়ে যায়। যার ফলে চুল দ্রুত তৈলাক্ত হয়ে পড়ে, চুল পড়া বাড়ে এবং খুশকি তৈরি হয়। এসব থেকে বাঁচতে অনেকেই নানা রকম চুলের যত্ন নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই যত্নেও কিছু সাধারণ ভুল হয়ে যায়, যার কারণে উপকারের বদলে চুলের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। চলুন দেখে নেওয়া যাক গরমে চুলের যত্নে আমরা যে ভুলগুলো করে থাকি।
প্রতিদিন শ্যাম্পু করা
গরমে ঘেমে গেলে মাথা নোংরা হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু তাই বলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা ঠিক নয়। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উঠে যায়, যা চুল শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। এর ফলে চুল পড়া ও স্প্লিট এন্ডের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। সপ্তাহে ২–৩ বার হালকা ও সিলিকন/সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করাই উত্তম।
ভেজা চুলে চিরুনি চালানো
অনেকেই চুল ধোয়ার পরপরই ভেজা অবস্থায় চিরুনি চালান। এটি একটি মারাত্মক ভুল। কারণ চুল ভেজা থাকলে তা সবচেয়ে বেশি নাজুক থাকে। এমন সময় চিরুনি চালালে চুল সহজে ছিঁড়ে যায় এবং চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই চুল আধা শুকনো হওয়ার পর চিরুনি ব্যবহার করুন এবং চওড়া দাঁতের চিরুনি বেছে নিন।
চুলের সুরক্ষায় অবহেলা
গরমে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি চুলের প্রোটিন ক্ষয় করে, যার ফলে চুল রুক্ষ, প্রাণহীন হয়ে পড়ে। বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করা, স্কার্ফ বা হ্যাট দিয়ে চুল ঢেকে রাখা খুব দরকার। চাইলে হেয়ার সিরাম বা হিট প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন যা UV ফিল্টারযুক্ত।
বেশি হিট স্টাইলিং
গরমে এমনিতেই তাপমাত্রা বেশি থাকে। এর ওপর হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইনার, কার্লার ইত্যাদি ব্যবহার চুলের ওপর আরও চাপ ফেলে। গরমে চুলে তাপদানের কাজ যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে কুল সেটিং ব্যবহার করুন। আর হিট ব্যবহার করার আগে অবশ্যই হিট প্রটেকশন স্প্রে ব্যবহার করুন।
চুল বাঁধার ভুল পদ্ধতি
গরমে ঘেমে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই চুল শক্ত করে টাইট করে বাঁধেন, যা চুলের গোড়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে হেয়ার ফলিকল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চুল পড়তে শুরু করে। আবার ঘন ঘন চুল বাঁধা ও খোলা চুলের ঘর্ষণেও ক্ষতি হতে পারে। তাই হালকা খোঁপা বা পনি টেইল করে রাখুন যাতে মাথার ত্বক শ্বাস নিতে পারে।
হেয়ার মাস্ক বা তেল বাদ দেওয়া
গরমে অনেকেই তেল বা হেয়ার মাস্ক ব্যবহার এড়িয়ে চলেন। এটি ভুল। চুলের গভীর পুষ্টির জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েলের হালকা গরম করে ম্যাসাজ করা দরকার। পাশাপাশি ঘরে তৈরি হেয়ার প্যাক যেমন দই, মেহেদি, ডিম, কলা দিয়ে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি না পান করা
চুলের সুস্থতার জন্য শুধু বাইরের যত্ন যথেষ্ট নয়, ভিতর থেকেও হাইড্রেটেড থাকা দরকার। গরমে শরীর ঘামার কারণে পানিশূন্যতা হয়, যার প্রভাব চুলেও পড়ে। পর্যাপ্ত পানি না খেলে চুল শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।