শরীরের প্রতিটি অংশের যত্ন নেওয়া হলেও কানের যত্নে অবহেলা করে থাকি। অথচ কানের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ আমাদের শ্রবণক্ষমতার প্রধান অঙ্গ কান। প্রতিদিনই কানের সঠিক যত্নের প্রয়োজন। নয়তো সংক্রমণ, মোম জমা, শ্রবণক্ষমতা হ্রাসসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কানের যত্নে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে।
কান পরিষ্কার
কান পরিষ্কার রাখার জন্য খুব বেশি চেষ্টা করা উচিত নয়। কানের নিজস্ব প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা আছে। যা কানের ভেতর ধুলাবালি ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ ঢোকার হাত থেকে রক্ষা করে। কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার করেন করা ক্ষতিকর। কটন বাড কানের ভেতরের মোমকে আরও ভেতরে ঠেলে দেয়। ফলে তা জমা হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই কান পরিষ্কার করতে হলে নরম কাপড় দিয়ে কানের বাইরের অংশ আলতোভাবে মুছে নিলেই হয়।
পানি ঢুকে যাওয়া
অসাবধানতাবশত গোসলের সময় বা অন্য যেকোনো কারণে কানে পানি ঢুকে যেতে পারে। যা সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। সাঁতার কাটার সময় বা গোসল করার সময় কান প্লাগ বা সিলিকন বাড ব্যবহার করা উচিত। যা কানে পানি ঢোকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। যদি কানে পানি ঢুকে যায়, তবে কান শুকানোর জন্য মাথা একদিকে কাত করে আস্তে আস্তে ঝাঁকানো যেতে পারে। এতে পানি বেরিয়ে আসবে।
শব্দের দূষণ
উচ্চ শব্দের কারণে কানের শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। উচ্চ শব্দের উৎস যেমন বড় কনসার্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা, বা হেডফোনের মাধ্যমে জোরে গান শোনা কানের ক্ষতি করতে পারে। তাই এই ধরনের স্থানে কান প্লাগ ব্যবহার করা উচিত। হেডফোন ব্যবহারের সময় ভলিউম নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
কানের মোম পরিষ্কার
যাদের কানে নিয়মিত মোম জমে তারা নিজেরাই তা পরিষ্কার করতে যান। কিন্তু এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কান পরিষ্কারের জন্য মোম সরানোর দ্রব্য ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসকরা প্রায়ই অ্যালার্জির জন্য বিশেষ কানের ড্রপ বা ওষুধের পরামর্শ দেন। যা মোম নরম করে এবং কানের মোম সরাতে সহায়ক হয়।
কানের সংক্রমণ
কানের সংক্রমণ একাধিক কারণে হতে পারে, যেমন সাঁতার কাটার পর পানি জমা থাকা, অপরিষ্কার হাত দিয়ে কান খোঁচানো, বা ঠাণ্ডা-সর্দির কারণে। কানের সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো কান ব্যথা, কানে ভারী অনুভব এবং শ্রবণক্ষমতা হ্রাস। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
কানের যত্নের জন্য নিয়মিত কানের ডাক্তার বা ইএনটি (ইয়ার, নোজ, থ্রোট) বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। বিশেষ করে যদি কানে কোনো ব্যথা, চুলকানি, বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন। চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা করবেন এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেবেন।
কানে আঘাত
অনেক সময় খেলাধুলা বা দৈনন্দিন কাজে কানে আঘাত লাগতে পারে। যা কানের ভেতরের অংশে ক্ষতি করতে পারে। তাই খেলাধুলা করার সময় হেলমেট বা কানের সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত গিয়ার ব্যবহার করা উচিত। যদি কোনো দুর্ঘটনায় কানে আঘাত লাগে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হেডফোন ও ইয়ারফোনের সঠিক ব্যবহার
হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহারের সময় উচ্চ শব্দে গান বা কোনো অডিও শোনা উচিত নয়। দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহারে কান ক্লান্ত হতে পারে এবং শ্রবণক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি থাকে। তাই ব্যবহারের সময় ভলিউম কমিয়ে রাখা উচিত এবং নিয়মিত বিরতি নেওয়া উচিত।
হাঁচি বা কাশি করার সময় সতর্কতা
হাঁচি বা কাশি করার সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখা উচিত। যেন কানের ভেতরে চাপ না পড়ে। হাঁচি বা কাশি করার সময় বেশি জোরে করলে কানের পর্দায় চাপ পড়তে পারে। যা কানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।