• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আলিঙ্গনেই ম্যাজিক, প্রতিদিন কতবারে সুফল মিলবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
আলিঙ্গনেই ম্যাজিক, প্রতিদিন কতবারে সুফল মিলবে
আলিঙ্গন জাদুর মতো কাজ করে। ছবি: সংগৃহীত

১২ ফেব্রুয়ারি পুরো বিশ্বে পালিত হয় ‘হাগ ডে’, অর্থাৎ আলিঙ্গন দিবস। প্রিয় মানুষকে আলিঙ্গন করে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করার দিন। বাঙালিদের মধ্যে কুশল বিনিময়ের সময় আলিঙ্গন করার রীতি এমনিতেই প্রচলিত রয়েছে। তবে বিশেষ এই দিনে আলিঙ্গন করার মাধ্যমে উৎসবে মেতে উঠতে বাঙালিরাও পিছিয়ে নেই।  

আলিঙ্গন জাদুর মতো কাজ করে। তাই আলিঙ্গনকে জাদু কি ঝাপ্পি বলা হয়। প্রেম সপ্তাহের শেষ দিকেই দিবসটি পালিত হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। এর ঠিক দুই দিন আগেই আলিঙ্গন দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রিয়জনকে অনুভূতি প্রকাশ এবং সেই অনুভূতির গভীরতা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায় আলিঙ্গনের মাধ্যমে। এতে একে অপরের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক আরো গভীর হয়।

শুধু দিবসেই নয় আলিঙ্গন করা সবসময়ই জরুরি এবং স্বাস্থ্যকর। বিশেষজ্ঞরা জানান, আলিঙ্গন করলে মানসিক চাপ কমবে। নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আর সম্পর্ক শক্তিশালীতো হবেই। কারণ আলিঙ্গনে স্পর্শ হয়। আর স্পর্শ হচ্ছে মানসিক থেরাপি।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, মাত্র ২০ সেকেন্ড আলিঙ্গন করলেই একে অপরের মধ্যে পজিটিভ উদ্দীপক কাজ করে। কারণ ওই সময় শরীরে অক্সিটোসিন এবং নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। যা প্রাকৃতিক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। তাই আলিঙ্গন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বিভাগে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। সেখানে প্রিয়জনকে সমর্থন দেওয়ার স্নায়বিক সম্পর্কের ওপর বিস্তর পর্যালোচনা করা হয়। গবেষণায় ২০ দম্পতি অংশ নেয়। বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়। শক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীরা তাদের স্বামীর হাত চেপে ধরেন। ওই সময় স্ত্রীর মস্তিষ্কে মানসিক চাপসংক্রান্ত কার্যকলাপ হ্রাস পায় এবং মাতৃসুলভ আচরণ বৃদ্ধি পায় বলে গবেষণায় প্রমাণ হয়। সেই গবেষকরা ফলাফলে জানান, স্পর্শ করা বা আলিঙ্গন করার মাধ্যমে মস্তিষ্কে এমন প্রতিক্রিয়া হয়। তাই কাউকে আলিঙ্গন করে সান্তনা দিলে বা শুভেচ্ছা জানালে মানসিক চাপ করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।

শুধু তাই নয়, আলিঙ্গন শারীরিক স্বাস্থ্যকেও চাঙ্গা করতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একে অপরকে আলিঙ্গন করলে ভয়, দুশ্চিন্তা দূর হবে। ব্যথার অনুভূতি থাকলে তা কমে যাবে। সেই সঙ্গে কার্ডিওভাস্কুলার-সংক্রান্ত উপকার তো রয়েছেই।

আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট একাডেমিক পাবলিশিং কোম্পানি প্রকাশিত সেজ জার্নালসের এক গবেষণায় আলিঙ্গনের স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জানানো হয়। সেখানে ৪ শতাধিক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালানো হয়। সেখানে প্রমাণিত হয়, আলিঙ্গন করলে ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

এছাড়াও ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এই বিষয়ে আরেকটি গবেষণা চালায়। সেখানে ২০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অংশ নেন। প্রথম দলে ব্যক্তিদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল। তারা ১০ মিনিট সঙ্গীর হাত ধরে ছিলেন। ২০ সেকেন্ড করে আলিঙ্গন করে ছিলেন। অন্যদিকে আরেকটি দলের ব্যক্তিরা ১০ মিনিট এবং  ২০ সেকেন্ড শুধু পাশাপাশি বসে ছিলেন। ফলাফলে দেখা যায়, প্রথম দলের সঙ্গীদের রক্তচাপ এবং হার্ট রেটের অবস্থা দ্বিতীয় দলের তুলনায় ভালো। তাই বলা যায়, আলিঙ্গনে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

এদিকে ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগের জন্যও আলিঙ্গন হতে পারে মহাঔষধ। এআই একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা। এই অসুখে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হয়। সারা শরীরে তীব্র ব্যথা থাকে। সেজ জার্নালসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইব্রোমায়ালজিয়ার রোগীদের জন্য় ৬টি থেরাপিউটিক স্পর্শের চিকিৎসা রয়েছে। এসব চিকিৎসায় ত্বকে স্পর্শের প্রয়োজন। আলিঙ্গন করলে সেই স্পর্শ পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বিবেচনা করে বলা হয়, শুধু বিশেষ দিবসে নয় বরং প্রতিদিন আলিঙ্গন করা জরুরি। প্রিয়জনের সঙ্গে তো বটেই, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গেও আলিঙ্গন করা মন্দ নয়। মাদার অব ফ্যামিলি থেরাপি’খ্যাত মার্কিন ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ভার্জিনিয়া স্যাটিয়ার জানান, ‘ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪বার আলিঙ্গন করা জরুরি। আর মেইটেন্যান্স থেরাপিতে ৮ বার আলিঙ্গন করতে হয়। এছাড়াও দৈনন্দিন উন্নতির জন্য প্রতিদিন অবশ্যই ১২ বার আলিঙ্গন প্রয়োজন।

তাই প্রিয়জনের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়ে উষ্ণ আলিঙ্গন করে ‘হাগ ডে’এর বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই পারেন। এই আলিঙ্গন হতে পারে পরিবার, বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গেও। আবার শিশুদেরকে আলিঙ্গন করে তাদের ভরসার জায়গাটা আরও মজবুত করতে পারেন।

সূত্র: হেলথলাইন

Link copied!