এই বছর দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন কোরআন হাফেজরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরআ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন এই হাফেজরা। তারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করে দিয়েছেন। চলুন জেনে আসি, ২০২৪ সালে পবিত্র কোরআনকে ধারণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা সেসব হাফেজের পরিচয়।
হাফেজ মুশফিকুর রহমান
২০২৪ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার মঞ্চে সাফল্য পান ক্ষুদে হাফেজ মুশফিকুর রহমান। ফেব্রুয়ারিতে কাতারে অনুষ্ঠিত তিজান আন নূর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক হাফেজের মধ্য থেকে সেরা ১৬ জন হাফেজ অংশগ্রহণ করেন। সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হন মুশফিকুর রহমান। তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শায়েখ কারি নাজমুল হাসান প্রতিষ্ঠিত তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ মাদরাসার শিক্ষার্থী।
হাফেজ বশির
বিস্ময়কর মেধার অধিকারী হাফেজ বশির আহমাদ। মাত্র পাঁচ মাসে তিনি হিফজ শেষ করেন। ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১০ দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে বশির প্রথম হন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও এই বছর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থানের অধিকারী হন তিনি। মেধাবী বশির ঢাকার মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার শিক্ষার্থী।
হাফেজ হুজায়ফা
এই বছর মার্চে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার মঞ্চে অংশ নেন ১০ বছর বয়সী ক্ষুদে হাফেজ হুজাইফা। তানজানিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন এই ক্ষুদে হাফেজ। ৩১ মার্চ তানজানিয়ার দারুস সালামে ‘তানজানিয়া ইন্টারন্যাশনাল হলি কোরআন অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’-এর প্রতিযোগিতায় তার নাম ঘোষনা হয়। হুজাইফা যাত্রাবাড়ীর তাহফিজুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসার ছাত্র।
হাফেজ আবু রায়হান
এপিল মাসে সেনেগালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন হাফেজ কারি আবু রায়হান। এটাই প্রথম নয়, ২০১৮ সালেও কাতারে তিজান আন নূর আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম ছিলেন এই হাফেজ।
হাফেজ মুয়াজ ও আনাস বিন আতিক
সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ৪৪ তম আসর বসে এই বছর। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন হাফেজ আনাছ বিন আতিক ও হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। পৃথক দুটি গ্রুপে তারা প্রথম স্থান অর্জন করেন তারা। হাফেজ আনাছ বিন আতিক ঢাকার মারকাজুত তাহফিজের ছাত্র। আর হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ঢাকার মারকাযু ফয়জিল কোরআন আল ইসলামি কিতাব বিভাগের ছাত্র।
হাফেজ মুয়াজ মাহমুদের আরও অর্জন
২০২৪ সালে দুইবার কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ। অক্টোবরে তুরস্কে অনুষ্ঠিত নবম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মুয়াজ মাহমুদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও পুরস্কার তুলে দেন।
হাফেজ আনাস মাহফুজ
এই বছর নভেম্বর মাসে হাফেজ আনাস মাহফুজ আন্তজার্তিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। কুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩ তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৮ থেকে ১২ বছরের ছিগারুল হুফফাজ (শিশু হাফেজদের গ্রুপ) গ্রুপে অংশ নিয়ে এই অর্জন পান তিনি। আনাস মাহফুজ মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামীর শিক্ষার্থী।
নারী হাফেজ হুমাইরা মাসউদ
কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন নারী হাফেজ হুমাইরা মাসউদ। মিশরের নতুন রাজধানী ‘প্রশাসনিক কায়রো’তে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা। সেখানে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন তিনি। হুমাইরা মিশরের বিখ্যাত আজহার ইনস্টিটিউটে সানুবি (উচ্চ মাধ্যমিক) অধ্যয়নরত রয়েছেন।
হাফেজ মাহমুদুল হাসান
২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইউরোপ ভিত্তিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন হাফেজ মাহমুদুল হাসান। তিনি তুরস্কের ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন। ২০২৩ সালেও তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন।
ভার্চুয়াল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন আরও কয়েকজন হাফেজ। হাফেজ সাদিকুর রহমান তানজানিয়ায়, হাফেজ জাকারিয়া ইন্দোনেশিয়ায় ও হাফেজ আকমাল আহমাদ ইরানে আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।