• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চিনে নিন আসল টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ০১:০৯ পিএম
চিনে নিন আসল টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি
টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির বুনন

যুগ যুগ ধরেই বাঙালি নারীরা শাড়িপ্রেমী। কেননা নারীর সৌন্দর্যের প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ ঘটে শাড়িতেই। তাই যুগ বদলে গেলেও শাড়ির প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি হয়নি।

সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে শাড়ির মোটিফে, স্টাইলেরও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বাঙালি নারীদের জন্য ঐতিহ্য বহনকারী শাড়ির কদরই আলাদা। এখনও ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি নারীদের পছন্দের সেরার তালিকায় রয়েছে।

বাঙালির ঐতিহ্যে গৌরবের সঙ্গে মিশে আছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি। আদিকাল থেকেই এই শাড়ির কদর রয়েছে। সেই সময় বাড়ির আঙিনায় বস্তা ধরে হাজির হতেন বিক্রেতারা। আঙিনাতেই নানা ধরনের তাঁত শাড়ি মেলা খুলে বসতেন। যেখান থেকে পছন্দসই শাড়ি কিনে নিতেন বাড়ির তরুণী থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা । সময় বদলে গেছে। এখন তাঁত শাড়ির সমাহার বসে বিভিন্ন মেলা, শপিংমলের দোকানে কিংবা অনলাইনে। তবে যত সহজলভ্যতা এসেছে ততই নকলের ভিড়ে আসল টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি চেনা দায় হয়ে পড়েছে। গুণগত মান আর বুনন দেখেই বেছে নিতে হয় আসল টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি। আসল টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি চেনার আগে তার ইতিহাস  সম্পর্কে কিছু জেনে নিন।

সূক্ষ্ম বুনট, বিচিত্র ও আকর্ষণীয় নকশার জন্য এখন বিশ্বজুড়ে পরিচিত টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণকাহিনীতেও এই শিল্পের উল্লেখ পাওয়া গেছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়,  প্রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে টাঙ্গাইলে তাঁতশিল্পের প্রসার ঘটে। ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা থেকে এই শিল্পের শুরু হয়। তাইতো টাঙ্গাইলের নামেই পরিচিতি পায় এই তাঁত শাড়ি। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু তাঁতি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যান। সেখানেও তারা টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি শুরু করেন। সবচেয়ে পুরনো তাঁতি সম্প্রদায় হলো টাঙ্গাইলের পাথরাইলের বসাক সম্প্রদায়। বাংলাদেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী শিল্প মসলিন তাঁতিদের বংশধররাই মূলত টাঙ্গাইলের পুরনো তাঁতি বা কারিগর। সেই সময় মুসলমান তাঁতিদের বলা হতো জোলা। তাদের অধিকাংশ ছিল টাঙ্গাইল, কালিহাতী ও গোপালপুরের বাসিন্দা। ক্ষৌম বস্ত্র বো মোটা কাপড় বোনার কাজে তারা ছিলেন পারদর্শী।

আসল টাঙ্গাইল শাড়ি চেনার উপায়

  • চিত্তরঞ্জন (মিহি) তাঁত ও পিটলুম (খটখটি) তাঁত দিয়ে বোনা হয় টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি। যা দিয়ে শাড়ির ওপর তৈরি করা হতো নানা রং ও ডিজাইন।
  • টাঙ্গাইল শাড়ির মধ্যে এখন পাওয়া যায় সুতি তাঁত শাড়ি, হাফ সিল্ক শাড়ি, জরিপাড়, হাজারবুটি, ইককাত, নীলাম্বরী, ময়ুরকন্ঠী। 
  • আসল টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির বৈশিষ্ট্য হলো পাড় বা কিনারের নান্দনিক কারুকাজ। এসব শাড়ির কিনারে মোটা কিংবা চিকন পাড়ের কাজ থাকবেই।
  • টাঙ্গাইল শাড়ি দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ১৪ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়।
  • তাঁতীরা ১০০, ৮২, ৮৪ কাউন্টের সুতো দিয়ে টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি বুনন করেন। তাই এই শাড়ি মূলত হালকা রঙেরই হয়।
  • টাঙ্গাইলের শাড়ির আরেক বৈশিষ্ট হল সূক্ষ বুনন এবং আকর্ষনীয় নকশা। আদিকালে টাইঙ্গাইলে শাড়ি নকশা ছিল সরল কিংবা জ্যামিতিক ধরনের এবং জমিনে ছিল বুটি কাজ। প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এসব ডিজাইনের পরিবর্তন হয়েছে। তাঁতিরা এখন ডবি এবং জ্যাকার্ড মেশিন ব্যবহার করে যে কোন নকশাই টাঙ্গাইল শাড়িতে ফুটিয়ে তোলেন। তবে তা হয় সূক্ষ ও আকর্ষনীয়।
  • সাধারণত হাফ সিল্ক আর সুতি কাপড়েরই বুনন হয় টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ি। তাইতো গরমে নারীদের প্রথম পছন্দ থাকে এই শাড়ি।
Link copied!