দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ইসলামি শরিয়তে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। আরবি বছরের জিলহজের ১০ তারিখ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কারও কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। অনেকে মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে চান। জানার বিষয়, এটি কি জায়েজ?
ইসলামি শরিয়তে, মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া জায়েজ। এর বিনিময়ে সওয়াব পাবেন তারা। আর কোরবানির নেসাব হচ্ছে- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে ৫২ (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নেসাব হলো: এর মূল্য সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে।
সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি আলাদাভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমার মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তাতে কি তার সওয়াব হবে?’ নবীজি উত্তর দিলেন, ‘হ্যা।’ (বুখারি: ১৩৩৮, মুসলিম: ১০০৪)।
মৃত মা-বাবার ঈসালে সওয়াবের জন্য তাদের পক্ষে কোরবানি করা জায়েজ। এটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ এটি অসিয়তের কোরবানি নয়, বরং কোরবানিদাতা নিজেরই কোরবানি হিসেবে ধর্তব্য হবে। এতে মৃত মা-বাবা সওয়াব পাবেন। এ কোরবানির গোশতের বিধান হলো- কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতোই নিজে খেতে পারবেন। আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৩৫; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬৯)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের ও খাসিকৃত মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি উম্মতের যারা আল্লাহর একাত্মবাদের ও তার নবুওয়ত প্রচারের সাক্ষ্য দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (ইবনে মাজাহ: ৩১২২)
তবে, মৃতব্যক্তি কোরবানির অসিয়ত করলে এবং তার রেখে যাওয়া এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কোরবানি করলে সেই গোশত নিজেরা খেতে পারবেন না, বরং পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে। (খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩২২; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৩৫)
শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, অসিয়ত পূরণের জন্য মৃতের সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি খরচ করা যায় না। অসিয়ত পূরণ করতে হবে ওই এক তৃতীয়াংশ থেকেই। বাকি দুই তৃতীয়াংশ ওয়ারিসদের হক। (হেদায়া: ৪/৬৩৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৬/৪৪৭)
মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পদ না থাকলে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব নয়। নিজের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হলে আগে নিজের কোরবানি করা উচিত। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যাবে। এতে করে নিজের কোরবানিও আদায় হবে, আবার মৃতকে সওয়াবও পৌঁছানো হবে। এটা নিরাপদ ও উত্তম পদ্ধতি। (মাজমাউল আনহুর: ০২/৫১৬; আল-বাহরুর রায়েক: ০৮/৩১৮; রাদ্দুল মুহতার: ০৯/৪৮৪)