• ঢাকা
  • শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৩ শা'বান ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ও তরুণদের ভাবনা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ও তরুণদের ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

ভাষা মানুষের পরিচয়ের অন্যতম প্রধান উপাদান। ভাষার মাধ্যমে মানুষ নিজের চিন্তা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস বহন করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এই দেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল মাতৃভাষার অধিকারের জন্য। তাই এই দিনটিই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত, যা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের ভাষাপ্রেমীদের জন্য গর্বের বিষয়।

কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজের কাছে ভাষা দিবসের তাৎপর্য কেমন? তারা কীভাবে এ দিনটিকে উপলব্ধি করে? ভাষা আন্দোলনের চেতনা কীভাবে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলে?

ভাষা দিবস ও ইতিহাসের প্রতি তরুণদের মনোভাব

বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তি ও গ্লোবালাইজেশনের যুগে বেড়ে উঠেছে। তারা অনেকেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানে, তবে অনেকের মধ্যে সেই চেতনার গভীরতা তেমন নেই। অনেক তরুণ ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেয়, কবিতা আবৃত্তি করে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাষা দিবসের পোস্ট দেয়, কিন্তু ভাষার প্রকৃত গুরুত্ব অনেকে বোঝে না।

তবে আশার কথা হলো, অনেক তরুণই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী এবং তারা জানে যে এটি শুধু একটি দিবস উদযাপনের বিষয় নয়, বরং আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রতীক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাষা আন্দোলনের ওপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজন করা হলে তরুণদের মধ্যে এই চেতনা আরও গভীরভাবে প্রোথিত হতে পারে।

মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও তরুণদের দায়িত্ব

বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং তা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। অনেক তরুণ ইংরেজি শেখার প্রতি আগ্রহী, যা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ, তবে মাতৃভাষাকে অবহেলা করা উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক তরুণ বাংলা বানানে ভুল করে বা বাংলার পরিবর্তে অহেতুক ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে কথা বলে, যা ভাষার শুদ্ধতা নষ্ট করে। তরুণদের উচিত বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা করা, সাহিত্য পড়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তরুণ সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।

প্রযুক্তি ও ভাষার পরিবর্তন

প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে। আজকাল তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা লিখতে গিয়ে ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করেন। এটি ভাষার গঠন ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে। বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে বাংলা ফন্টের প্রচলন আরও বাড়ানো উচিত। যাতে তরুণরাও সহজে বাংলা টাইপ করতে পারে। বাংলা ভাষার বিকাশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বাংলা ভাষার ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভাষান্তর সফটওয়্যার, এবং বাংলা কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে আমরা ভাষার আধুনিকীকরণ করতে পারি। তরুণ প্রজন্মকে এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

বিশ্বায়ন মাতৃভাষার গুরুত্ব

গ্লোবালাইজেশনের ফলে বিভিন্ন ভাষার প্রভাব আমাদের সমাজে পড়ছে, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইংরেজি শেখা দরকার। তবে মাতৃভাষার গুরুত্ব ভুলে গেলে চলবে না। অনেক উন্নত দেশ যেমন জাপান, চীন, জার্মানি মাতৃভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের উন্নত করেছে। তরুণদের বুঝতে হবে, মাতৃভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তাই বিদেশি ভাষা শেখার পাশাপাশি বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার, প্রচার ও সংরক্ষণ করা জরুরি।

ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও তরুণদের করণীয়

ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য ছিল না, এটি ছিল আমাদের আত্মপরিচয়ের লড়াই। এই চেতনা বর্তমান সময়েও প্রাসঙ্গিক। তরুণদের উচিত বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা করা। দৈনন্দিন জীবনে বাংলার সঠিক উচ্চারণ ও বানান চর্চা করা। বাংলা সাহিত্য পড়া ও প্রচার করা। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদ্দীনসহ সমসাময়িক লেখকদের বই পড়া ও তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে হবে।  বাংলা ব্লগ লেখা, বাংলা ভাষায় ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি করা ও বাংলা অ্যাপ ডেভেলপ করতে হবে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা করা যেমন– নাটক, গান, আবৃত্তির মাধ্যমে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে। ভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রচার চালাতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষার গুরুত্ব বোঝানো ও বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যেতে হবে।

বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতেই। তাই তাদের সচেতন হওয়া, ভাষার সঠিক ব্যবহার করা এবং বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কাজ করা জরুরি।

Link copied!