কর্মব্যস্ত জীবনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ারই সুযোগ থাকে না। সেখানে প্রিয় মানুষকে সময় দেওয়ার বা কাছের মানুষদের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর সময় কই আমাদের? অথচ জানেন কি, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে জীবন সহজ হয়ে যায়। ভার অনেকখানি নেমে যায়! নিজেকে হালকা ও চনমনে লাগে।
আবার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান অবহেলায় হার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখতেও নাকি আলিঙ্গন উপকারী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আলিঙ্গন করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদ্স্পন্দনের হারও নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুখী হওয়া যায়। মানসিক প্রশান্তি আসে। যে মানসিক অবস্থাতেই থাকুন না কেন, কাছের মানুষের আলিঙ্গন আপনার জন্য একটি ইতিবাচক বিষয়। এ হলো ভালো থাকার রসদ। সেজন্য দিনে অন্তত ৪ বার হলেও আলিঙ্গন করুন। মাদার অব ফ্যামিলি থেরাপি’খ্যাত মার্কিন ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ভার্জিনিয়া স্যাটিয়ার জানান, ‘ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪বার আলিঙ্গন করা জরুরি। আর মেইটেন্যান্স থেরাপিতে ৮ বার আলিঙ্গন করতে হয়। এছাড়াও দৈনন্দিন উন্নতির জন্য প্রতিদিন অবশ্যই ১২ বার আলিঙ্গন প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরবেন কেন-
হার্ট ভালো রাখে
আলিঙ্গন রক্তচাপ ও মানসিক চাপ কমিয়ে হার্ট ভালো রাখে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের একটি গবেষণা করে। গবেষণায় ২০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে দুটি দলে ভাগ করে। তাদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল। তাদের একটি দল ১০ মিনিট একে অপরের হাত ধরে ছিলেন এবং ২০ সেকেন্ড করে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন। অন্য দলে যারা ছিল তারা ১০ মিনিট ২০ সেকেন্ড পাশাপাশি চুপচাপ বসে ছিলেন। তার পরই দেখা যায়, দ্বিতীয় দলের চেয়ে প্রথম দলের সঙ্গীদের রক্তচাপের মাত্রা ও হার্ট রেট বেশ ভালো অবস্থায় আছে। গবেষণা অনুসারে বলা যেতে পারে, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
মানসিক চাপ কমায়
আলিঙ্গনে দেহ ও মন শিথিল হয়। আলিঙ্গন করলে ‘হ্যাপি হরমোন’ নামে পরিচিত অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়, যা মনকে শান্ত ও চাপমুক্ত রাখে। একই সঙ্গে স্ট্রেস হরমোন করটিসলের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে কমে আসে মানসিক চাপ। তাই কাজের খুব চাপ থাকলে বা অন্যের কথায় মানসিক চাপে থাকলে প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করুন। তাতে মানসিক চাপ কমে আসবে।
কষ্ট ও হতাশা কমায়
আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে নীরবেই মানুষ নিজের অনুভূতির আদান-প্রদান করে ফেলে। তাতে কষ্টের অনুভূতি কমে আসে। এমনকি আপনি যদি কোনও কারণে হতাশ থাকেন সেক্ষেত্রেও আপনার কাছের মানুষকে জড়িয়ে ধরুন। হতাশা কমে আসবে। আবার অনেক সময়েই অকারণে মনখারাপ লাগে, তখন প্রিয়জনের একটি আলিঙ্গন আপনার মন ভাল করে দিতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আলিঙ্গন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ এটি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রাগ ও ক্ষোভ প্রশমন করে
কোনও কারণে যদি রাগ হয় বা ক্ষুব্ধ থাকেন, সেই সময় আপনাকে শান্ত করতে পারে প্রিয়জনের আলিঙ্গন। আপনার মধ্যকার ইতিবাচকতার পরশ এই আলিঙ্গনের ভেতর দিয়েই পেয়ে যাবেন তিনি।
একাকিত্ব দূর করে
কাছের মানুষদের থেকে যত দূরে সরে যাবেন, নিজেকে তত বেশি নিঃসঙ্গ লাগবে। আলিঙ্গন মনে করিয়ে দেয়, আপনি নিরাপদ, অন্যের কাছে প্রিয় এবং একা নন। তাই একাকিত্ব দূর করতে আলিঙ্গনের অভ্যাস করুন।
উদ্যমী হয়ে উঠতে
কাছের কারও আলিঙ্গনের ফলে একজন ব্যক্তি কাজকর্মেও উদ্যমী হয়ে ওঠেন। তাঁর কাজের স্পৃহা বাড়ে। জীবনের ছন্দপতনের ঝুঁকি কমে। ঘুমের মান বাড়াতেও সাহায্য করে আলিঙ্গন।
যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করে
মৌখিকভাবে বা মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে বেশির ভাগ মানুষের যোগাযোগ তৈরি হয়। কিন্তু অনেক সময় অনেক কিছু বলা যায় না। সেক্ষেত্রে একবার জড়িয়ে ধরলে পরস্পরের মধ্যে নিরবেই একটা যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে কথা বলা সহজ হয়।