ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি হচ্ছে যাকাত। এটি ইসলামের ফরজ বিধান। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমান পুরুষ ও নারীর প্রতি বছর নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করার নামই হচ্ছে যাকাত। পবিত্র কোরআনে নামাজের পর যাকাতের কথাই সবচেয়ে বেশি বলা রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। (সুরা বাকারা: ১১০)”
পবিত্র রমজান মাসে যাকাত আদায় করা হয়। হিজরি ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রতি বছর একবার যাকাতের হিসাব করতে হয়। অনেকেই রমজান মাসেই যাকাত আদায় করেন। তবে যারা ৩০ রমজানের মধ্যে যাকাত আদায় করতে পারেন না তাদেরকে পুরো এক বছর মেয়াদে যাকাত আদায় করতে হবে। সেই অনুযায়ী এই বছর যেই তারিখে যাকাত আদায় করলেন পরের বছর একই তারিখের মধ্যে যাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করতে হবে। যাকাতের অর্থ হিসাব করার পর তা পুরো আদায় করা জরুরি নয়। ওই অর্থ সারা বছরই অল্প অল্প করে দেওয়া যাবে।
যাকাত আদায়ের কয়েকটি খাত রয়েছে। ঋণ পরিশোধ যাকাতের অর্থ ব্যয়ের অন্যতম একটি খাত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহের মধ্যে ঋণগ্রস্তদের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয় সদকা হচ্ছে দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; তা বণ্টন করা যায় দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তওবা: ৬০)
যাকাতের নিয়তে কোনো ব্যক্তির ঋণ মাফ করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন থাকে। হাদিসের তথ্য মতে, যাকাত প্রদানকারী নিজে যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এবং দারিদ্র্যের কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না এমন ব্যক্তির কাছে টাকা পাওনা থাকে, তাহলে যাকাতের টাকায় তার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম যাকাতের টাকা ওই দরিদ্র ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে। এরপর তার কাছ থেকে নিজের পাওনা আদায় করে নেবে। তবে যাকাতের টাকা তার হাতে দেওয়া জরুরি। যাকাতের টাকা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে না দিয়ে ঋণ মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না।
এছাড়াও যাকাত প্রদানকারী ছাড়া অন্য কেউ ওই দরিদ্র ব্যক্তির কাছে টাকা পাওনা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে যাকাত প্রদানকারী ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির অনুমতি নিয়ে যাকাতের টাকায় তার ঋণ পরিশোধ করে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যাকাতের টাকা ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির হাতে দেওয়া জরুরি নয়। তবে অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া কারো ঋণ পরিশোধ করলেও যাকাত আদায় হয় না।