বর্তমানে মানুষের ব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে সংসারে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার মতো সুযোগ থাকে না। তাই নিরুপায় হয়ে ভরসা রাখতে হয় অন্যের ওপর। সেক্ষেত্রে গৃহকর্মী ছাড়া বিকল্প কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি অনেকের বাস্তবতা এমন পর্যায়ে যে শিশু সন্তানটির যত্নের ভারও ছেড়ে দিতে হয় গৃহকর্মীর ওপর।
তাই বেশিরভাগ মানুষই এখন গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। তবে আপনার চিন্তার বোঝা হালকা করা হোক বা কাজের বোঝা কমিয়ে দেওয়া হোক, যে গৃহকর্মীটি আপনার পাশে রয়েছে তার সঙ্গে কেমন আচরণ হওয়া উচিত সেটিও জানা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, অনেক সময় তাদের আমরা যথাযথ সম্মান দিতে ভুলে যাই। যেটি উচিত নয়। চলুন তাহলে জেনে নিই গৃহকর্মীর সঙ্গে কেমন আচরণ হওয়া উচিত—
- গৃহকর্মীর ওপর কখনোই অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। আপনার সময়, সুযোগ ও সাধ্যমতো তার কাজে সহযোগিতা করুন।
- আপনার সাধ্যমতো গৃহকর্মীকে মাঝে মাঝে ভালো পোশাক দিন।
- তাকে সঙ্গে করে কোথাও নিয়ে গেলে কাজের লোক না বলে গৃহকর্মী বা গৃহসহকারী বলে পরিচয় দিন। এতে তিনি সম্মানিতবোধ করবেন।
- আপনি যা খান তাদেরও তা খেতে দিন। প্রতিদিন তাকে খেতে দিন। উচ্ছিষ্ট বা বাসি খাবার দেবেন না। তাকে কোনো খাবার খেতে দেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি এ খাবারটি খেতেন কিনা।
- বিশ্বস্ত হলেও সবক্ষেত্রে তার ওপর নির্ভরশীল হবেন না। আলমারির চাবি বা মূল্যবান জিনিস তার কাছে গচ্ছিত রাখবেন না। তার সামনে টাকাপয়সা গুনবেন না, স্বর্ণালঙ্কার নাড়াচাড়া করবেন না। এগুলো তার মনে বঞ্চনা, খারাপ লাগা বা লোভ সৃষ্টি করতে পারে।
- ধর্মীয় উৎসবে, সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিজেরা কিছু কিনলে তাকেও সাধ্যমতো কিনে দিন।
- অন্য বাসার গৃহকর্মীকে প্ররোচিত করে নিজের বাসায় নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- সম্বোধনে ‘তুই’ ব্যবহার করা থেকে পারতপক্ষে বিরত থাকুন। আপনার চেয়ে বয়সে বড় মনে হলে নামের সঙ্গে চাচা/ খালা/ ভাই/ আপা সম্বোধন করুন।
- অসুস্থ হলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে দিন। সম্ভব হলে সেবা দিন।
- ঘুমানোর জন্যে পরিষ্কার মশারি, লেপ/ কম্বল/ কাঁথা, চাদর, স্বাস্থ্যসম্মত ফ্লোর ম্যাট্রেস দিন। রাতে অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুমাতে দিন।
- অক্ষরজ্ঞান না থাকলে তাকে অক্ষরজ্ঞান দান করুন।
- নামের বিকৃত উচ্চারণে তাকে ডাকবেন না। আত্মীয়-পরিজনদের নামের সঙ্গে তার নাম মিলে গেলেও নাম বদলে দেবেন না।
- বাড়তি কাজ করাতে হলে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিন।
- ভুলেও শারীরিকভাবে প্রহার করবেন না, গালিগালাজ করবেন না। ভুল করলে তাকে বুঝিয়ে বলে শোধরানোর চেষ্টা করুন, তা না হলে তাকে অব্যাহতি দিন।
- সময়মতো কাজে না এলে বা অনুপস্থিত থাকলে রাগারাগি/ দুর্ব্যবহার করবেন না। যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকলে বা এটা অভ্যাসে পরিণত হলে সেদিনের বেতন কেটে রাখার নিয়ম করতে পারেন।
- বাসায় মেহমান আসার আগেই তাকে কিছু খেতে দিন যাতে মেহমানদের সেবাযত্ন করার প্রয়োজনীয় শক্তিটুকু সে পায়।
- অসাবধানে দামি কিছু ভেঙে ফেললে বিষয়টি সহজভাবে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- চুরি বা মিথ্যা বলার অভ্যাস প্রমাণিত হলে দ্রুত তাকে বিদায় দিন।
- গৃহকর্মীকে কখনো দোকানে বা বাজারে পাঠাবেন না।
- পরিবারের কেউ গৃহকর্মীর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করলে পরিবারের সদস্যের পক্ষ নেবেন না। তার প্রতি সুবিচার করুন।
- হঠাৎ করেই কাউকে চাকরিচ্যুত করবেন না। নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অন্তত একমাস আগে তাকে জানিয়ে দিন, অথবা একমাসের বাড়তি বেতন দিয়ে অব্যাহতি দিন।
- নিয়োগদানের আগেই চাকরির শর্তসমূহ (বেতন, কাজের ধরন ইত্যাদি) নিয়ে পরিষ্কারভাবে কথা বলুন। উৎসবে বোনাসের ব্যবস্থা রাখুন।
- কাজের আগে বা মাস না ফুরালে পুরো মজুরি অগ্রিম প্রদান করবেন না। বেতন আটকেও রাখবেন না।
- নিজেরা সোফায় বা বিছানায় বসে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখবেন না বা মাটিতে বসতে বলবেন না। তাদেরও বসার ব্যবস্থা রাখুন।
- কোনোকিছু হারিয়ে গেলে প্রথমেই তাকে সন্দেহ করবেন না। এ নিয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেসও করবেন না।
- চাকরিচ্যুত কাউকে পুনরায় নিয়োগ না করাই ভালো।
- ছুটি চাইলে শুরুতেই ‘না’ বলবেন না। পরিস্থিতি ও তার প্রয়োজনকে বিবেচনায় আনুন।