রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ। এই দিনটির দিবাগত রাতকে বলা হয় শবে বরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ইবাদতের রাত। হাদিসে বলা হয়, এই রাত হলো লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী।
মহান আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) তথা আখেরি নবীর উম্মতের জন্য ইবাদতের বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ইবাদতের মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যার একটি হচ্ছে শবে বরাত বা মুক্তির রাত তথা ‘নিসফ শাবান’।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)’
বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তার সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৫৬৬৫)
এক হাদিসে আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন—‘একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এতো দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো, তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)
শবে বরাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোনো নিয়ম বা নিয়ত নেই। অন্যান্য নফল নামাজের মতোই এই রাতে নফল নামাজ আদায় করতে হয়। শবে বরাতে নামাজ পড়ার কোনো নিয়ম বর্ণনা করেননি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সাহাবিরাও কোনো পৃথক নিয়মে নফল নামাজ পড়েননি। বরং স্বাভাবিক নিয়মেই নফল ইবাদত করেছেন। তাই শবে বরাতের ইবাদত বা নির্দিষ্ট করে আমল তৈরি করলে তা বিদয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে। শবে বরাতের রাতে মুসলিমরা নফল ইবাদত করবেন। কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করবেন।
শবে বরাতের রাতে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে আল্লাহর রাসূল বরকত চেয়ে এই দোয়াটি করা যেতে পারে
আরবি : اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান
অর্থ : হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯)
শবে বরাতের রোজা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত ও দিনে রোজা পালন করো। (ইবনে মাজাহ)
আরবির প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের নফল রোজা করা সুন্নত। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই রোজা পালন করতেন। তাই শাবান মাসেও এই তিনটি রোজা রাখা সুন্নত। এছাড়াও হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাস ছাড়া রজব ও শাবান মাসে বেশি নফল ইবাদত তথা নফল নামাজ ও নফল রোজা করতেন। শাবান মাসে কখনো ১০টি নফল রোজা, কখনো ২০টি নফল রোজাও রাখতেন বলে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।