বিদ্যুৎ, গ্যাস, আগুন এসব থেকে সবসময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত। কারণ বড় ধরণের দুর্ঘটনার জন্য এগুলোর একটি হলেই যথেষ্ট। যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে এসব উপাদান। তাই সারাক্ষণ নজরদারিতে রাখাটাই নিরাপদ।
এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো গ্যাসের লাইন। সেটি সিলিন্ডার গ্যাস হোক কিংবা লাইনের সাপ্লাই গ্যাস দুটোতেই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ চুলায় গ্যাস লিক হলে বা কোনো সমস্যা থাকলে বড় বিপদ ঘটতে বেশিক্ষণ লাগবে না। তাই চলুন জেনে নিই চুলার গ্যাস লিকেজ হলে কীভাবে আগে থেকে বুঝবেন-
- গ্যাসের লাইন ঠিক আছে কিনা এবং গ্যাসের চুলার সঠিক যত্ন হচ্ছে কিনা সেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
- গ্যাস নানাভাবে বের হয়ে আসতে পারে। নিম্নমানের চুলা ও চুলায় ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পাইপ থেকেও গ্যাস লিক হতে পারে। সেই অবস্থাতেও বাতাসে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। এই গন্ধ তীব্র হয় না।
- পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হলে সেখানে যদি পানি থাকে তাহলে বুদবুদ দেখা যায়। এভাবেও বোঝা যায় গ্যাস বাইরে চলে আসছে।
- বড় আকারে গ্যাস বাইরে এলে শোঁ শোঁ শব্দ হয়। কিন্তু ছোট আকারে ছিদ্র হলে গ্যাস যে পরিমাণ বের হয়, তা অনেক সময় বোঝা কঠিন। তাই হালকা গন্ধ পেলেই সতর্ক হতে হবে।
- খেয়াল রাখুন লাইটার দিয়ে গ্যাসের ওভেন জ্বালানোর সময় ‘ক্লিক’ করে শব্দ হয় কিনা। যদি কোনো শব্দ শোনা না যায়, কিন্তু গ্যাসের গন্ধ পান, তাহলে বুঝবেন চুলায় সমস্যা রয়েছে।এক্ষেত্রে গ্যাস বন্ধ করে বার্নারক্যাপ সরিয়ে ফেলুন। ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করুন।
- বার্নারে যদি আগুনের শিখা মৃদু জ্বলে তবে গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার গ্রেটস এবং বার্নার ক্যাপ সরিয়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। গ্যাসের চুলা বেকিং সোডা ও ভিনিগার দিয়ে পরিষ্কার করলে ভালো হয়।
- গ্যাস লিকেজ হলে ঘরের কিংবা পাশের বাগানের ছোট গাছগুলো অক্সিজেনের অভাবে মরে যেতে পারে। তাই হুট করে ঘরের টবের ছোট গাছ বা বাগানের গাছগুলো মরে গেলে খেয়াল করুন গ্যাস লিকেজ হয়েছে কি না।
- গ্যাস লিকেজ হলে ঘরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে। ফলে শরীরে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথার মতো শারীরিক উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
গ্যাস লিকেজ শনাক্ত হলে যা যা করবেন
- বাড়িতে যদি গ্যাস লিকেজ শনাক্ত হয়, তাহলে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যান। ঘর থেকে বের হয়ে বেশ ফাঁকা এবং নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
- লিকেজ শনাক্ত হলে কোনোভাবেই ঘরের কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালু করবেন না এবং সুইচ চাপবেন না। দেশলাই বা লাইটার দিয়ে কোনো কিছু জ্বালবেন না।
- আবদ্ধ ঘরে জমে থাকা গ্যাস দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই ঘরের দরজা–জানালা খুলে দিয়ে বাইরের বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে দিন। এতে বিপদের আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসবে।
- সিলিন্ডার বা পাইপলাইন থেকে গ্যাস লিকেজ শনাক্ত হলে দ্রুত সিলিন্ডার বা পাইপলাইনের গ্যাসের যে প্রধান সরবরাহ থাকে, তা বন্ধ করুন।
- গ্যাস লিকেজ শনাক্ত হলে দেরি না করে দ্রুত নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস বাহিনীকে ডাকুন। এতে যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা সম্ভব।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়
- নিয়মিত গ্যাসলাইন রক্ষণাবেক্ষণ করুন।
- প্রয়োজন ছাড়া গ্যাস লাইনের ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
- সম্ভব হলে বাড়িতে কার্বন মনোক্সাইড শনাক্তকারী যন্ত্র লাগান।
- গ্যাসের প্রধান সরবরাহ লাইন বন্ধ রাখার সুইচ হাতের নাগালে রাখুন।
- ঘরে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখুন।