• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বন্যায় পরিবারের সদস্যদের যেভাবে আগলে রাখবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম
বন্যায় পরিবারের সদস্যদের যেভাবে আগলে রাখবেন
ছবি: সংগৃহীত

বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যা মুহূর্তের মধ্যে মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় আনতে পারে। পানি বাড়তে থাকলে ঘরবাড়ি ডুবে যায়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা। পুরো পরিবারকে নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। তবুও পরিবারের পাশে থেকে যথাসম্ভব তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন সবাই। কারণ এই সময় পুরো পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বন্যার সময় পরিবারের খেয়াল রাখার জন্য কী কী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায় চলুন জেনে নেই।

বন্যার পূর্বের প্রস্তুতি

বন্যার পূর্বাভাস পেলে আগে থেকেই পরিবারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করুন। বন্যার সময় কোথায় আশ্রয় নেবেন, কীভাবে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাবেন এবং কোথায় একত্রিত হবেন সবকিছু পরিকল্পনা করে নিন। জরুরি যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর এবং স্থানীয় জরুরী পরিষেবার নম্বর সংরক্ষণ করুন।

প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখা

বন্যার আগেই একটি ইমার্জেন্সি কিট প্রস্তুত রাখুন। এতে খাবার, বিশুদ্ধ পানির বোতল, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, টর্চলাইট, ব্যাটারি, চার্জার, শুকনো খাবার, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র রাখুন। বন্যার পূর্বাভাস পেলে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস এবং পানির লাইন বন্ধ করুন। মূল্যবান সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র এমন জায়গায় রাখুন যা বন্যার পানিতে নষ্ট হবে না।

বন্যার সময় করণীয়

বন্যার পানি বাড়িতে ঢুকতে শুরু করলে মনোবল ঠিক রেখে পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মনোবল ঠিক রাখা প্রয়োজন। প্রথমেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। বন্যার পানি বাড়তে শুরু করলে বাড়ির উঁচু স্থানে চলে যান। সম্ভাব্য আশ্রয় কেন্দ্রের ঠিকানা আগে থেকেই জেনে রাখুন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন। মোবাইল ফোনের চার্জ সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। স্থানীয় রেডিও বা টিভি চ্যানেলগুলোতে খবর শুনুন। এতে বন্যার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

বন্যার সময় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। যথাসম্ভব বোতলজাত এবং বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া খাবার অপচয় করা যাবে না।

বন্যার পানিতে বিদ্যুৎ সংযোগের ঝুঁকি থাকতে পারে। পানিতে বিদ্যুতের খুঁটি, তার ইত্যাদি থেকে পরিবারকে দূরে রাখুন। পানিতে হাঁটার সময় সবাই যেন সাবধান থাকে তা নিশ্চিত করুন। পানির নিচে বিপজ্জনক বস্তু বা গর্ত থাকতে পারে। যা থেকে বড় বিপদ হতে পারে।

বন্যার পরে করণীয়

বন্যা পানি যখন কমে যাবে তখন পরিবারের সুরক্ষায় আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। বাড়িতে ফেরার আগে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিন। বাড়ি ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পরীক্ষা করে নিন। বন্যার পরে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই পরিবারের সবাই যেন  বিশুদ্ধ পানি পান করে এবং খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয় তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজন হলে টিটেনাসের টিকা গ্রহণ করুন।

বাড়ি পরিষ্কার করার সময় রাবারের গ্লাভস ও বুট ব্যবহার করুন। খাবার ও পানির উৎসগুলো পরিষ্কার করুন। ঘরের ফার্নিচার ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। এরপর সেগুলো আবার ঘরে সাজিয়ে দিন।

বন্যার পর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মানসিক আঘাত থেকে যেতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে। পরিবারের সদস্যদের মানসিক সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যথাসম্ভব পরিবারের সবাই একসঙ্গেই সময় কাটান। কথা বলুন এবং সহানুভূতি প্রকাশ করুন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

বন্যার ক্ষতি মোকাবিলার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও প্রয়োজন। বাড়ি পুনর্গঠন করার সময় বন্যার ঝুঁকি কমানোর জন্য উঁচু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন। পরিবারের সদস্যদের বন্যার ক্ষতি এবং এর প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করুন। ভবিষ্যতে বন্যা মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত রাখুন।

Link copied!