• ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

এই গরমে স্কুলপড়ুয়া সন্তানের যত্ন কীভাবে নেবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
এই গরমে স্কুলপড়ুয়া সন্তানের যত্ন কীভাবে নেবেন
ছবি: সংগৃহীত

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম পড়ে। এই সময় রোদের তেজের কারণে ঘামের পরিমাণ বেড়ে যায়।  পানিশূন্যতা হয়। অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে ঘরের বাইরে যাওয়া মানুষগুলো। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া সন্তানরা। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যেতে হয়, কখনও লম্বা সময় বাসে বা রিকশায় রোদে থাকতে হয়, কখনও আবার মাঠে খেলাধুলাও করে। এই বয়সে তারা নিজেদের যত্ন নিতে পারে না। তাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব আরও বেশি বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেই, এই গরমে স্কুলপড়ুয়া সন্তানের যত্ন কীভাবে নেবেন।

আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে
বেশিরভাগ স্কুলের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম থাকে, যা অনেক সময় গরমে আরামদায়ক হয় না। যদি সম্ভব হয়, স্কুলে আবেদনের মাধ্যমে হালকা তুলার কাপড়ের ইউনিফর্ম অনুমোদন করাতে পারেন। ইউনিফর্ম না থাকলে অবশ্যই সুতি, হালকা রঙের এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরাবেন। গা ঘেঁষা পোশাক শিশুদের ঘেমে অস্বস্তিতে ফেলে এবং ত্বকের সমস্যা বাড়ায়।

ছাতা, ক্যাপ ও পানির বোতল সঙ্গে দিন
রোদে চলাফেরার সময় ছাতা ব্যবহার বা ক্যাপ পরে বের হওয়া খুবই জরুরি। শিশুকে ছোট থেকেই এগুলোর ব্যবহার শেখানো উচিত। যদি সে বাইরে রোদে বেশি থাকে তবে সানগ্লাস পরার অভ্যাস করাতে পারেন। ব্যাগে পরিষ্কার রুমাল বা ওয়েট টিস্যু দিয়ে দিন। গরমে ঘেমে গেলে নিজেই যেন তা ব্যবহার করতে পারে।

সকালে হালকা-পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান
অনেক সময় দেখা যায়, শিশু খালি পেটে স্কুলে যাচ্ছে বা শুধু বিস্কুট-চিপস খেয়েই বেরিয়ে পড়ছে। গরমে খালি পেটে বের হওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই সকালে উঠে এক গ্লাস পানি খাওয়ানোর পর হালকা খাবার দিন—যেমন দুধ-সিরিয়াল, ডিম-পাউরুটি, স্যান্ডউইচ, বা ভাত-মুড়ি-ডাল। স্কুলে টিফিন হিসেবে ফল, কেক, পাউরুটি, স্যান্ডউইচ, খেজুর, চিড়া-দই ইত্যাদি দিতে পারেন। ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার একদম দিবেন না।

পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—পানির ঘাটতি যেন না হয়। শিশুদের শরীর বড়দের তুলনায় দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিন সকালেই তাদের স্কুলব্যাগে পানির বোতল দিয়ে দিন। বোতলে চাইলে হালকা লেবুর শরবত, ডাবের পানি বা স্যালাইনও দিতে পারেন। স্কুল থেকে ফিরে এসেই যেন সে পানি খায়—এটা অভ্যাস করাতে হবে। পানির পাশাপাশি ফলের রস, শসা, তরমুজ, মালটা, আনারস ইত্যাদিও খাদ্যতালিকায় রাখুন।

ত্বকের যত্ন নিন
গরমে শিশুদের ত্বকে ঘামাচি, র‍্যাশ, ফাংগাল ইনফেকশন দেখা দেয়। তাই নিয়মিত গোসল করানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। যদি রোদে বের হয়, তাহলে ত্বক রক্ষায় শিশুদের জন্য উপযোগী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। স্কুল থেকে ফিরে পোশাক বদলে দিন।

বিশ্রাম নিশ্চিত করুন
স্কুল থেকে ফিরে শিশুর শরীর ক্লান্ত থাকে। গরমে এই ক্লান্তি আরও বেশি হয়। তাই ঘরে ফিরে তাকে বিশ্রামের সুযোগ দিন। স্কুলের হোমওয়ার্ক বা টিউশনের জন্য সঙ্গে সঙ্গেই চাপ না দিয়ে আগে শরীর ঠান্ডা হতে দিন। হালকা নাশতা খেতে দিন। তারপর পড়াশোনার সময় নির্ধারণ করুন।

ঠান্ডা পানীয় বেশি দেওয়া যাবে না
গরমে অনেক সময় শিশুরা ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম বা ফ্রিজে রাখা ফল খেতে চায়। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা জিনিস খেলে হঠাৎ ঠান্ডা-জ্বর বা গলা ব্যথা হতে পারে। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। ফ্রিজের খাবারও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কিছু সময় রেখে দিন।

প্রতিদিন গোসল করাতে হবে

দুইবেলা গোসল শিশুর জন্য খুব উপকারী, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। এটি শরীর ঠান্ডা রাখে, ক্লান্তি কমায় এবং ত্বকের সমস্যা দূর করে। গোসলের সময় সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড ব্যবহার করলে আরও ভালো।

খেলার সময় নিয়ন্ত্রণ করুন
শিশুরা স্বাভাবিকভাবে খেলতে ভালোবাসে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে দুপুরে রোদে বা অতিরিক্ত গরমে খেলাধুলা করলেই হিট স্ট্রোক বা ক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই খেলাধুলার সময় সন্ধ্যা বা সকালের দিকে রাখাই ভালো।

শিশুর আচরণ খেয়াল রাখুন
গরমে শিশু হঠাৎ করে কাহিল লাগতে পারে, খেতে ইচ্ছা না করতে পারে, বিরক্ত লাগতে পারে, ঘাম বেশি হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হোন। পানি খাওয়ান, বিশ্রাম দিন, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এই গরমে স্কুলপড়ুয়া সন্তানের একটু যত্ন, একটু ভালোবাসা আর সামান্য সচেতনতা গরমকালেও আপনার সন্তানকে সুস্থ, সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে পারে। সন্তানের প্রতিদিনের রুটিনে সামান্য পরিবর্তন এনে খাবার ও বিশ্রামের দিকে মনোযোগ দিয়ে সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

Link copied!