ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে শরীর এবং স্বাস্থ্যের ওপর। এই সময়ে পরিবেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং অন্যান্য আবহাওয়াগত উপাদানগুলোর পরিবর্তন ঘটে। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় সচেতন থাকা ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সঠিক পোশাক পরিধান, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, রোগ প্রতিরোধে প্রস্তুতি এবং ঘরের পরিবেশ সঠিক রাখার মাধ্যমে ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ ও সতর্ক থাকতে পারেন। ঋতু পরিবর্তনের সময় কীভাবে সতর্ক থাকা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সঠিক পোশাক পরিধান
ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে সাধারণ ভুল হলো আবহাওয়ার উপযোগী পোশাক না পরা। শীতকালে তাপমাত্রা কমে যায় এবং ঠান্ডা বাতাসের কারণে শরীর সহজেই তাপমাত্রা হারায়। তাই গরম পোশাক, সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, মোজা, এবং গ্লাভস পরা উচিত। হেডকভার বা টুপি দিয়ে কান এবং মাথা ঢেকে রাখা জরুরি, কারণ শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে মাথা দিয়ে বের হয়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে। তাই হালকা ও সুতির কাপড় পরা উচিত। যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে। প্রচণ্ড রোদে বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন এবং সানগ্লাস পরে চোখকে রোদ থেকে সুরক্ষিত রাখুন। বর্ষাকালে ভেজা কাপড় এবং জুতার কারণে ঠান্ডা লাগা বা ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। তাই বর্ষাতি বা ছাতা এবং জলরোধী জুতা ব্যবহার করা উচিত।
সুষম খাদ্য গ্রহণ
ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ঋতুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাবার খেলে শরীর সহজেই পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। শীতকালে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যা শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আদা, মধু, গরম স্যুপ, এবং শাকসবজি খেতে পারেন। এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন লেবু, কমলালেবু ইত্যাদি খেলে ঠান্ডা জনিত অসুখ প্রতিরোধ করা যায়। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে থাকে। এই সময় শরীর দ্রুত পানি হারায়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি তাজা ফল, যেমন তরমুজ, শসা, লেবু এবং তাজা সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যা শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখে। বর্ষাকালে হজম ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়। তাই সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এই সময় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
রোগ প্রতিরোধে প্রস্তুতি
ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, ফ্লু, অ্যালার্জি এবং অন্যান্য অসুখের ঝুঁকি বেশি থাকে। এসব রোগ প্রতিরোধে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক ও শ্বাসযন্ত্র শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ঠান্ডা, ফ্লু থেকে বাঁচতে গরম পোশাক পরুন এবং শরীর গরম রাখুন। ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। গ্রীষ্মকালে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত এবং বেশি রোদে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো। এছাড়া পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলো লক্ষ্য করা উচিত। বর্ষাকালে মশার প্রজনন বেড়ে যায়। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি থাকে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারির ব্যবহার এবং শরীর পুরোপুরি ঢাকা পোশাক পরিধান করা উচিত।
ঘরের পরিবেশ সঠিক রাখা
ঋতু পরিবর্তনের সময় শুধু নিজের শরীর নয়, ঘরের পরিবেশও ঠিক রাখা জরুরি। সঠিক তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বজায় রাখা রোগের ঝুঁকি কমায়। শীতকালে ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন হিটার ব্যবহার করা বা দরজা-জানালা বন্ধ রাখা। তবে ঘর খুব বেশি শুষ্ক হয়ে গেলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। গ্রীষ্মকালে ঘর ঠান্ডা রাখতে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন এবং ঘরের আলো স্বাভাবিক রাখার জন্য সঠিকভাবে জানালা খোলা রাখুন। বর্ষাকালে ঘর শুকনো রাখতে হবে, যাতে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে না পারে। দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন এবং মশা প্রতিরোধে নিয়মিত স্প্রে বা মশারি ব্যবহার করুন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ব্যায়াম
ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ব্যায়াম করা প্রয়োজন। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। শরীরকে সক্রিয় রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করুন। শীতকালে ঘরের ভিতরে ব্যায়াম করুন এবং গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাইরে হালকা ব্যায়াম করুন।