বৃষ্টির রাত অনেকের কাছে রোমাঞ্চকর, আবার অনেকের কাছে ভীতিকর বা অস্বস্তিকর। বিশেষ করে ভারী বৃষ্টি বা ঝড় হলে মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। কারণ ভারী বৃষ্টি থেকে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বৃষ্টির দিনের সময় যেমন সতর্ক থাকতে হয়, বৃষ্টির রাতেও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নিলে এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে ঝুঁকি ও অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই ভারী বৃষ্টি বা ঝড় হলে নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিরাপত্তা
বৃষ্টির রাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সতর্কতা। বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎ সৃষ্টির কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই বিদ্যুৎ লাইন, তার বা যন্ত্রপাতির সংস্পর্শে না যাওয়াই ভালো। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাতের কাছে টর্চলাইট বা অন্যান্য বিকল্প আলোর ব্যবস্থা রাখুন। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। বাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়লে আরও সাবধান হতে হবে।
যানবাহন চলাচলে সতর্কতা
যারা বৃষ্টির রাতে বাহিরে যান, তাদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারী বৃষ্টির কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বৃষ্টির সময় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ এতে গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকে। যদি খুব বেশি দরকার না থাকে, তবে বৃষ্টির রাতে বাহিরে বের না হওয়াই ভালো।
বন্যা ও জলাবদ্ধতা মোকাবিলা
বৃষ্টির রাত মানেই অনেক সময় জলাবদ্ধতা বা বন্যার আশঙ্কা। ভারী বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকায় দ্রুত পানি জমে যায়। যা বাসস্থান এবং চলাচলের জন্য বিপজ্জনক। বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা উচিত। বন্যাপ্রবণ এলাকায় বাস করলে আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেমন মূল্যবান জিনিসপত্র উঁচু স্থানে রাখা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতের কাছে রাখা।
স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা
বৃষ্টির রাতে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে যারা বাইরে কাজ করেন বা ভিজে যান। এজন্য নিজেকে সঠিকভাবে ঢেকে রাখা জরুরি। ভেজা কাপড় তাড়াতাড়ি বদলে শুকনো ও আরামদায়ক কাপড় পরতে হবে। যাতে ঠান্ডা লাগা বা অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বৃষ্টির সময় পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিও থাকে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এমন এলাকায় চলাফেরা করলে পানি পান করা এবং খাবার গ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
জরুরি সামগ্রী প্রস্তুত রাখা
বৃষ্টির রাতে যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো। হাতের কাছে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা উচিত, যেমন টর্চলাইট, অতিরিক্ত ব্যাটারি, শুকনো খাবার, পানির বোতল এবং ওষুধ। এছাড়াও মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ দিয়ে রাখা এবং স্থানীয় জরুরি সেবার নম্বর সংগ্রহে রাখতে হবে।
জানালা ও দরজা বন্ধ রাখা
বৃষ্টির রাতে ঠান্ডা বাতাস এবং পানি ঘরে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য জানালা ও দরজা ভালোভাবে বন্ধ রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোনো স্থান দিয়ে পানি চুইয়ে না পড়ে। যদি কোনো ফাঁকা বা ভাঙা স্থান থাকে, তাহলে তা আগে থেকেই মেরামত করে রাখা উচিত।
পোষা প্রাণীর যত্ন
যদি ঘরে পোষা প্রাণী থাকে, তবে তাদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। বৃষ্টির রাতে ঠান্ডা এবং ভেজা পরিবেশ তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পোষা প্রাণীদের ভিজতে দেওয়া ঠিক নয়, এবং তাদের জন্য ঘরের একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক স্থান নিশ্চিত করা উচিত।
মানসিক স্বস্তি বজায় রাখা
বৃষ্টির রাত অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর বা ভীতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যদি বজ্রপাত বা ঝড় হয়। তাই মানসিক স্বস্তি বজায় রাখা জরুরি। শিথিল থাকতে হালকা গান শুনতে পারেন বা বই পড়ে সময় কাটাতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন। সবাই একসঙ্গে থাকলে মানসিক শক্তি বাড়বে।