বর্তমান সময়ের গয়নার ফ্যাশনে হালকা নকশাই সবার পছন্দ। গৎবাঁধা ডিজাইনের ধারা থেকে বের হয়ে এখন হালকা নকশার গয়নায় ঝুঁকেছেন ফ্যাশনিস্তরা। বিশেষ করে হীরার তৈরির গয়নার প্রতি ঝোঁকটা একটু বেশিই। কথায় আছে, হীরা কাঁচ কাটে। কিন্তু হীরা কিনতে গিয়ে যদি কাঁচই কিনে আনেন তবে তা দুর্ভাগ্য বটে। আসল হীরা পাওয়া একসময় দুর্লভ ব্যাপার ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা বাজারে আসল হীরা নিয়ে ব্যবসা করছেন অনেক ব্যবসায়ী। সেই সুবাদে বর্তমান সময়ে ফ্যাশনিস্তরা হীরের গয়নার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
হীরা পৃথিবীর মূল্যবান পাথরগুলোর একটি। এর কদর বহু আগ থেকেই রয়েছে। নিজ গুণেই এর দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে ইদানিং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কম দামে হীরার তৈরি গয়না কেনার অফার দিচ্ছেন। যা কতটুকু খাটি তা যাচাই করে কিনতে হবে। কেননা হীরা কিনতে পকেটের অনেক টাকা খরচ হয়। তাই টাকা দিয়ে নকল হীরা কেনা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। হীরের নাম করে কাঁচ কিংবা কিউবিক জিরকোনিয়া চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা তাও যাচাই করে কেনা উচিত। এক্ষেত্রে আসল হীরার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। রত্নবিশেষজ্ঞ বা জেমোলজিস্টরা জানান, ঘরোয়া পদ্ধতিতেই আসল হীরা চেনা যাবে।
· হীরা একটি গ্লাসের ৪ ভাগের ৩ ভাগ পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। যদি তা তলিয়ে যায়, তাহলে এটি আসল। যদি ভেসে থাকে কিংবা আংশিক ডুবে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি নকল হীরা। এক্ষেত্রে হীরাটি কোনো ধাতব উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকলে হবে না। এতে সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না।
· হীরার আংটি বা নেকলেসে ধাতব অংশের নিচের দিকে থাকা লেখাগুলো খেয়াল করে দেখুন। ধাতুতে খোদাই করে এর গুণগত মান লেখা থাকবে। স্বর্ণের নীচে ১০কে, ১৪কে, ১৮কে ও ২২কে লেখা থাকে। প্লাটিনামের ক্ষেত্রে ৫৮৫, ৭৭০, ৯০০ এমন সংখ্যা বসানো থাকে। আসল হীরা বসানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত মানের ধাতু ব্যবহার করা হয়। সংযুক্ত ধাতুটির গায়ে লেখা দেখেই আসল হীরা কিনা তা যাচাই করা যাবে।
· আসল হীরা চেনার জন্য দুই আঙুলের মধ্যে হীরাটি রেখে বড় করে নিশ্বাস ছাড়ুন। নিশ্বাসের গরম বাতাস হীরার ভেতরে কুয়াশা বা ঘোলাভাব তৈরি করে। হীরাটি আসল হলে এই অবস্থা তৎক্ষণাৎ কেটে যাবে। কিন্তু নকল হীরা বা কাচ হলে তা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হবে। আসল হীরা তাপ সুপরিবাহী। যা নিশ্বাসের গরম তাপ পুরো অংশে ছড়িয়ে দিতে পারে।
· আসল হীরা চিনতে ইউভি লাইটের নিচে রেখে পরীক্ষা করে দেখুন। অধিকাংশ হীরা থেকে নীল রঙের দ্যুতি ছড়াবে। হীরা যদি নীলাভ উজ্জ্বলতা ছড়ায় তবে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
· আসল হীরা চিনতে সাদা কাগজে একটি ছোট বিন্দু এঁকে তার উপর হীরার সোজা অংশটি রাখতে হবে। এবার হীরার নিচের অংশের শেষ প্রান্ত দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে হবে বিন্দুটি দেখা যায় কি না। আসল হীরা দিয়ে এ বিন্দুটি দেখা যাবে না। আসল হীরায় আলো প্রতিসরিত হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে যায়। কিন্তু নকল হীরা তা স্পষ্ট দেখা যাবে।
· সাদা আলো আর রঙিন আলো দুটিই থাকে আসল হীরায়। একটি সাধারণ ল্যাম্পের নিচে রেখে ওপর থেকে দেখতে হবে প্রতিফলিত আলো কেমন। যদি সাদা ও রঙিন আলো উভয়ই দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল হীরা। কারণ কাচ ও কিউবিক জিরকোনিয়া তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ প্রতিফলন দেখাবে।
· হীরা কৃত্রিম হলে সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষলে সহজেই দাগ পড়ে যায়। এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। আসল হীরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্ত বস্তু। যা কোনো কিছু দিয়েই মসৃণ করা যায় না। তাই হীরা কেনার আগে বিষয়টি সহজেই পরখ করে নিতে পারেন।
সূত্র: কেন অ্যান্ড ডানা ডিজাইন