ইন্টারনেটের জগতে ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দিয়ে তৈরি নানা ছবি, ডিপফেক ভিডিও ইত্যাদি। প্রযুক্তি যত এগিয়েছে, মানুষকে ধোঁকা দেওয়া বা বোকা বানানো তত সহজ হয়েছে। যেকোনো সংকটে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতায় আরও বেশি করে ছড়ায় এ ধরনের ছবি। এআই ফটোগ্রাফারদের কখনো উদ্দেশ্য থাকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি, কখনোবা নিছক গুজব ছড়িয়ে মজা নেওয়া। দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতিতেও এআই দিয়ে তৈরি একাধিক ছবি ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ইতিমধ্যে বিশেষ একটি ছবি সবার নজর কেড়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই এ ছবি ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করছেন। ছবিতে একটি শিশুকে বন্যার পানির মধ্যে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় দেখা গেছে। সাদাকালো এই ছবিটি কোনো আলোকচিত্রীর ধারণ করা নয়।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছবিটি শেয়ার করেছেন। অনেকে শিশুটির সন্ধান চেয়েছেন। অনেকে স্থান জানতে চেয়েছেন। কেউবা ছবিটি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতে ছবিটি চেক করে এবং এআই দিয়ে তৈরি বলে জানা গেছে।
ছবিটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি। বিভিন্ন এআই ইমেজ ডিটেক্টর যেমন- ইসইটএআই ডটকম এবং হাইভ মডারেশন ডটকম টুলসে ইমেজটি চেক করে দেখা গেছে ছবিটি এআই দিয়েই তৈরি।
চলুন, বিবিসি অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক এআই ছবি চেনার তিনটি সাধারণ উপায়।
ছবিটি বিশদভাবে দেখুন
মাইক্রোসফটস এআই ইমেজ জেনারেটর, মিডজার্নি, ডাল ই, ডিপএআই—এ রকম বিভিন্ন ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যেম ছবি তৈরি করে এআই। সাধারণত পাবলিক ডোমেইনে থাকা অন্য ছবি থেকে তথ্য নিয়ে ছবি বানায়। ফলে এআইয়ের বানানো ছবিতে কিছু অসঙ্গতি থেকে যায়। কী রকম সেগুলো?
ব্যক্তির ছবিতে, বিশেষ করে হাত, পা ও আঙুলে অসামঞ্জস্য দেখা যায়। হাত ও পায়ের আঙুল দেখতে অস্বাভাবিক লাগে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, বিশেষ করে হাত ও পায়ের আকৃতি অন্য রকম দেখায়। অনেক সময় হাত ও পায়ের অবস্থান, দিক ঠিক থাকে না।
প্রায়ই হাত ও পায়ের আঙুল কম–বেশি, বিশেষ করে পাঁচটার জায়গায় ছয়টা দেখা যেতে পারে। সেগুলোও বাঁকা বাঁকা, কখনোবা অতিরিক্ত লম্বা হতে পারে।
মানুষের নাক, বিশেষ করে নারীদের নাক একটু বেশিই লম্বা দেখা যায়। চোয়ালের হাড়ও খানিকটা উঁচু থাকতে পারে।
ছবিতে যদি মানুষের চোখে চশমা থাকে, তাহলে তার প্রতিবিম্ব ঠিক থাকে না। কোনো প্রতিবিম্বই ঠিক থাকে না। সাধারণত মানুষ বা অন্য কোনো বস্তুর ছায়া খুঁজে পাওয়া যায় না।
ছবিতে কোনো টেক্সট বা বার্তা থাকলে, সেখানে গড়বড় থাকতে পারে।
ছবিটিতে মানুষের চেহারা সাধারণত বেশি ‘গ্লো’ করে। ‘শার্পনেস’ থাকে না। এআই দিয়ে বানানো মানুষের চেহারার ভেতরে একটু কার্টুন-কার্টুন ভাব থাকতে পারে।
মানুষের চোখের মণির খুঁটিনাটি সাধারণত পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললে ওই ছবি তোলার কিছু তথ্য পাওয়া যায়, যেমন কোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা, কবে, কখন তোলা, কে তুলেছে, ছবি তোলার সময়কার বর্ণনা ইত্যাদি। এআই দিয়ে বানানো ছবিতে স্বাভাবিকভাবেই তা থাকবে না।
একটু বেশিই ‘নিখুঁত’
এআই দিয়ে তোলা ছবি একেবারে নিখুঁত। মনে হবে, আপনি যেমনটা চেয়েছিলেন, তেমনই। অনেকটা ‘অর্ডার দিয়ে বানানো’র মতো আরকি। ‘এয়ারব্রাশড’ লুক। আর আশপাশের স্বাভাবিক উপাদানগুলোর অনেক কিছুই অনুপস্থিত থাকবে। দেখে মনে হতেই পারে, ‘কিছু একটা ঠিক নেই’ বা ‘এ রকম তো হওয়ার কথা নয়’।
‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’
ছবিটির সূত্র যাচাই করতে আপনি গুগল লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন ‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’। হাইভ মডারেশন ও ইয়ানডেক্সের মতো টুলও ব্যবহার করতে পারেন। আসলে ফেক ছবি যত বেশি ছড়ানো শুরু হয়েছে, এ ধরনের অ্যাপগুলোও জনপ্রিয়তা পেয়েছে সমান তালে। এসব ব্যবহার করে ছবিটি আর কোথায় কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে খুঁজে পাওয়া যাবে। এআই দিয়ে তৈরি ছবি খুব অল্প কিছু জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাবে। বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বা সূত্র থেকে ছবিটি এসেছে কি না, সেটিও বোঝা যাবে।
সূত্র: বিবিসি