শিশুরা চঞ্চল প্রকৃতির হয়। কোথাও স্থির হয়ে থাকে না। সারাক্ষণই খেলাধুলা, ছুটাছুটি করে। টেলিভিশন কিংবা মোবাইল ফোনের সামনে থাকলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তবে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়। এর বাইরে অন্যকিছু দিয়ে তাদের মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ছুটাছুটি যেন আরও বেড়ে যায়। কোনো কোনো বাচ্চাকে ছুটাছুটিতে বাধা দিলে কান্না, চিত্কার শুরু করে দেয়। এমন অবস্থায় সন্তানের পড়াশোনাতেও মন বসে না। যা নিয়ে খুবই চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরা।
অমনোযোগী শিশুদের মনোযোগী করার কিছু উপায় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সন্তানকে মনোযোগী করতে অভিভাবকদেরই ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তানের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে। সন্তানের মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন_
· সন্তানকে রুটিনের মধ্যে রাখতে হবে। কখন ঘুমাবে, কখন খাওয়া দাওয়া করবে, কতক্ষণ পড়াশোনা করবে এবং কতক্ষণ খেলবে এই বিষয়গুলো রুটিনের মধ্যে আনতে হবে।
· সন্তানকে সারাদিনই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত রাখবেন না। বিনোদনের জন্যও আলাদা সময় রাখবেন। সারাদিনের সব কাজের সমন্বয় এমনভাবে করবেন যেন সন্তানের উপর চাপ না পড়ে। তাদেরকে নিজের মতো সময় কাটাতে দিন। এতে পড়াশোনায় তাদের মনোযোগ বাড়বে।
· সন্তান কোন বিষয়ে বেশি আগ্রহী তা খেয়াল করুন। পড়াশোনায় দুর্বল হলে তাকে বেশি জোর করবেন না। বরং যেভাবে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যে পড়তে পারে তাই খেয়াল রাখুন। পড়াশোনার বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে পারদর্শী বা আগ্রহ থাকলে তাতে উত্সাহিত করুন। সৃজনশীল কাজে উৎসাহ পেলে সন্তানের ভবিষ্যতও সুন্দর হবে।
· সন্তানের বয়সের উপর তার মনোযোগ নির্ভর করে। ৫ বছরের বাচ্চার মধ্যে মনোযোগের কমতি থাকলে ১০ বছরের গিয়ে তা ঠিকও হয়ে যেতে পারে। তাই অভ্যাসের মাধ্যমে মনোযোগ বাড়াতে হবে। যেকোনো বয়সেই প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা খেলার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ছুটাছুটি বা খেলাধূলা করলে শরীরে ঘাম ঝরবে এবং এনডরফিন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হবে। তাতে বাচ্চাদের মনোযোগ বাড়বে।
· শিশুকে নিয়ে নিজেই খেলায় মেতে উঠুন। বিভিন্ন ধরনের ‘ব্রেন গেম’ খেলতে দিন। বিল্ডিং ব্লকস, পাজ়লসসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা রয়েছে। এসব খেলনার মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ হয়। তাই মোবাইল ফোনের পরিবর্তে শিশুকে নিয়ে খেলায় মেতে থাকুন। এতে শিশুর আগ্রহ বাড়বে। মনোযোগও ঠিক হবে।
· পড়াশোনার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ নিশ্চিত করুন। পড়ার জন্য আলাদা ঘর বা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করুন। শিশুর পড়ার সময় পাশে থাকুন। কখন কী প্রয়োজন হচ্ছে, কীভাবে পড়াকে সহজ করা যায় তা শিখিয়ে দিন।
· সন্তানের সামনে মোবাইল ফোনে বেশি সময় কাটাবেন না। আপনাকে মোবাইল ফোনে মনোযোগী হতে দেখলে সন্তানও তাই শিখবে। তাই সন্তানের সামনে বই বা খবরের কাগজ পড়ুন। সন্তানের পড়ার বইও পড়ুন। এতে সন্তানের মনোযোগ বাড়বে।
· সন্তানকে সময়ের কাজ সময়ে করা শেখান। পড়াশোনার বাইরে ছবি আঁকা, শেখাতে পারেন। ঘড়ি ধরে সময় দেখে নির্দিষ্ট কাজটি শেষ করতে বলুন। এতে সন্তান সময়ের মূল্য বুঝবে। ভবিষ্যতে লক্ষ্যপূরণে তা কাজেও আসবে। সন্তান যেকোনো কাজেই মনোযোগী থাকবে।