বয়স যখন ত্রিশ কি চল্লিশ পার হয়, তখন বাবা কিংবা মাকে হারানোর কষ্ট সহ্য করেন অনেকে। কারণ মা-বাবার বয়স তখন ষাটের উর্ধ্বে। বয়সের সঙ্গে রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। এক সময় বাবা মা আমাদের ছেড়ে চলে যান। জীবনে শূন্যতা ভর করে। আফসোস হতে থাকে, যদি বাবা মাকে আরেকটু সময় দিতে পারতাম! যদি তাদের প্রতি আরও যত্নবান হতাম! এমন আফসোস যখন করা হয়, তখন হয়তো বেশ দেরি হয়ে যায়। কারণ চলে যাওয়া প্রিয়জনকে আর ফেরানোর সুযোগ থাকে না।
প্রিয় মা-বাবার আয়ু কীভাবে বাড়ে, কীভাবে তারা বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারেন তা নিয়েই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি কানাডার কুইনস ইউনিভার্সিটির নতুন গবেষণা জানা যায়, যেসব বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গেই থাকেন তাদের গড় আয়ু তুলনামূলক বেশি থাকে। অর্থাত্ মা–বাবার সঙ্গে থাকা, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারলেই আয়ু বাড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
গবেষণায় বলা হয়, বাবা-মায়েরা একাকি থাকলে হুট করে বুড়ো হয়ে যায়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। গবেষণাটি ১ হাজার ৬০০ জন বয়স্ক মানুষের ওপর ২০ বছর ধরে পরিচালিত হয়। যাদের বয়স ছিল ৬৫–৮১–এর মধ্যে। তাদের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, একাকিত্বে থাকা মানুষদের তুলনায় সন্তানের সঙ্গে থাকা মানুষদের গড় আয়ু বেশি। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ পুরোপুরি একা হয়ে যান। তারা একা হওয়ার ৬ বছরের মধ্যে মারা যান। আর যারা সন্তান বা সঙ্গীর সঙ্গে ছিলেন তারা বেশি বছর বেঁচে ছিলেন।
গবেষণায় আরও উঠে আসে, বাবা-মাকে পর্যাপ্ত সময় দিলে তাদের আয়ু বাড়ে। সন্তানরা দীর্ঘ সময় বাবা মায়ের সঙ্গে থাকেন। এক সময় সন্তানরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। ওই সময় বাবা মায়ের বয়স বাড়ে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কসহ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যকারিতাও কমতে থাকে। তখন বাবা-মায়েরা সন্তানের অবহেলা সহ্য করতে পারেন না। একাকিত্ব থেকে দুশ্চিন্তার শুরু হয়। দুশ্চিন্তা থেকে শারীরিক ও মানসিক অসুখ দেখা দেয়।
এছাড়াও কর্মময় জীবনের পর বৃদ্ধ বয়সে কর্মহীন হয়ে পড়েন বাবা-মা। তারা অর্থনৈতিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েন। নানা জটিলতা তৈরি হয়। অনেকেই অবসরের পর স্ট্রোক করেন। তাই অবসরের পর বাবা মাকে যথেষ্ট সময় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্রয়োজনের দিকে নজর রাখা, তাদের সঙ্গে গল্প করা, বাইরে সময় কাটানো, তাদের চিন্তামুক্ত রাখতে পারলে গড় আয়ু বেড়ে যাবে।
সূত্র: ফিউচার কেয়ার গ্রুপ