সন্তানের শিক্ষার হাতেখড়ি দেন বাবা-মা। ছোটবেলায় পরিবার থেকেই শিক্ষার শুরু হয়। বড় হয়ে শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন অভিভাবকরা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অর্জন ভালো করতে অভিভাবকদের সহযোগিতায় কমতি থাকে না। তবে অনেক অভিভাবক এই বিষয়ে উদাসীন থাকেন। তারা সন্তানকে কীভাবে সহযোগিতা করবেন তা না ভেবে, বরং সন্তানের ফলাফলের জন্য তাকে শাসন করেন। অথচ সন্তানকে যথাযথ সমর্থন, সহযোগিতা ও উৎসাহ দিলে তাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হয়। কারণ অভিভাবকদের সহযোগিতা পেলে সন্তানরা আনন্দ নিয়ে শিখতে পারে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় সন্তানের রেজাল্ট ভালো করার জন্য অভিভাবকদের কয়েকটি বিষয়ে যত্নশীল ও সচেতন হতে হবে।
সময়সূচি
সন্তানের প্রতিদিনের কাজের সময়সূচি ঠিক করুন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সন্তান কী কী করবে তার জন্য সময় ধরে দিন। বিশেষ করে পড়াশোনার একটি সময়সূচি তৈরি করুন। পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে রেখে, বাকি সময়ে খেলাধুলা, ঘুম এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। পরীক্ষার আগের রাতে মানসিক চাপমুক্ত রাখুন।
নিরিবিলি পরিবেশ
সন্তানের পড়ায় মনোযোগী করতে এর উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দেওয়াও অভিভাবকদের দায়িত্ব। পড়াশোনা করার জন্য পরিচ্ছন্ন, শান্তিপূর্ণ, স্বাচ্ছন্দ্যময় পড়ার ঘরের ব্যবস্থা করুন। পড়ার ঘরে টিভি, কম্পিউটার রাখা যাবে না। হট্টগোল থেকে দূরে রাখতে হবে। নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করে দিন। এতে পড়ায় মনোযোগী হবে।
বিরতি দিন
সন্তানকে একটানা বসিয়ে লেখাপড়া করাবেন না। এতে ক্লান্তি আসে। একঘেয়েমি হয়ে পড়ে। বরং পড়ার ফাঁকে বিরতি দিন। অন্যান্য কাজে কিংবা খেলা নিয়ে অথবা বাইরে আশপাশ থেকে ঘুরিয়ে আনুন। এতে মানসিক শান্তি মিলবে। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে।
উৎসাহ দিন
সন্তানদের পড়াশোনায় দুর্বল হলেও তাকে উৎসাহ দিন। মানসিকভাবে কষ্ট পাবে এমন কোনো কথা বলবেন না। সন্তান ইতিবাচক সমর্থন পেলে আত্মবিশ্বাসী হবে। মানসিক উদ্বেগ কমবে। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। ভালো ফলাফলের জন্য অনুপ্রাণিত হবে।
নিজে নিয়ে বসুন
সন্তান উপরের শ্রেণিতে উঠলে গৃহশিক্ষক কিংবা কোচিং সেন্টারে পড়তে যায়। এরপর বাড়িতে এসে আবার পড়তে বসতে হয়। সেই সময়টাতে আপনিও সঙ্গে বসুন। সন্তান কী শিখল, সে ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর নিন। শেখার প্রক্রিয়ায় আপনিও যুক্ত হোন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়া আপনি তৈরি করতে দিন। কঠিন যে বিষয়গুলো সন্তান বুঝেনি, তা সমাধানের সাহায্য করুন।
খাওয়া-ঘুম নিশ্চিত করুন
সন্তানের খাওয়া ও ঘুম সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। পড়াশোনার চাপে পড়ে এসব বিষয়ে অবহেলা করলে চলবে না। সন্তান পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে কি না, যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাচ্ছে কি না, পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। সন্তান সুস্থ থাকলে তার স্মৃতিশক্তিও ভালো হবে।
শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ
সন্তানের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। সন্তান ক্লাসে কেমন পড়াশোনা করছে, তার উন্নতির জন্য কী কী করতে হবে এই বিষয়ে শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন। স্কুলের শিক্ষকেরা হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকে। সেখানে অভিভাবকদের জন্য গ্রুপও তৈরি করে। সেখানে পড়াশোনা–সংক্রান্ত সব তথ্য দেন। সেখানে নজর রাখুন। সন্তান সবকিছু ঠিকঠাক করছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। সন্তানের পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে শিক্ষকের সাহায্য নিন। এতে সন্তানও আগ্রহী হবে।
লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করুন
সন্তানকে লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করুন। সন্তান পরীক্ষায় কেমন রেজাল্ট করছে তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী সময়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন। তবে অবশ্যই তা বাস্তবসম্মত হতে হবে। সন্তান পড়াশোনায় দুর্বল হলে তাকে ক্লাসে প্রথম হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। এতে তার উপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ পড়বে। তাই যুক্তিসংগত লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন। সন্তানে ক্ষমতা অনুযায়ী ভালো রেজাল্টের উত্সাহিত করুন। ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ হলেই সাফল্য পাওয়া যাবে।