দুই পায়ে হেটে চলা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু একজোড়া লাঠির উপর ভর করে দুই পায়ে দাড়িয়ে চলা কী স্বাভাবিক! হ্যা, এটি বর্তমান সময়ের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। দীর্ঘ এক জোড়া বাঁশের মাঝখানে আড়াআড়ি পা রেখে লম্বা কদমে হাটা যায়। যাকে বলা হয় রণপা।
২৭ জুলাই রণপায় হাঁটা দিবস। বাংলার ঐতিহ্যবাহী রণপায় হাঁটার সঙ্গে অনেকেরই ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু রণপায় হাঁটা চল কীভাবে হয়েছিল, জানেন? কারা এটি বেশি ব্যবহার করতেন সেই তথ্য কি জানেন?
নব্বই দশকের আগ থেকেই রণপার প্রচলন ছিল। রণপায় এক কদম চলা মানেই দশ কদম এগিয়ে যাওয়া। সাধারণত শিশু-কিশোরদের খেলা ছিল এটি। যা অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হতো। এর প্রচলিত নাম রণপা হলেও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রাচীন গ্রিসে এর প্রচলণ ছিল। ওই সময় গবাদিপশুর পালে নজর রাখতে রাখালরা এটি ব্যবহার করতেন। লম্বা লাঠির ওপর দাঁড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। তাই রাখালরা নির্দিষ্ট স্থান থেকেই রণপা ব্যবহার করে গবাদিপশুর দেখভাল করতেন।
এছাড়াও উঁচু দালান নির্মাণের কাজেও ব্যবহার হতো রণপা। নির্মাণসামগ্রী ওঠানো-নামানো, দেয়ালে আস্তরণ দেওয়া কিংবা রং দেওয়ার কাজে রণপার প্রচলণ ছিল।
লোকনৃত্যেও রণপার ব্যবহার হতো। লোকগবেষকেরা রণপাকে ‘যুদ্ধ নৃত্য’ বা ‘গোষ্ঠী নৃত্য’ বলে অভিহিত করেন। শত্রুর মোকাবিলা কিংবা ডাকাতি করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার হতো রণপা। এতে দ্রুত কদমে পালিয়ে যাওয়া যেত।
বাংলাদেশেরও বিভিন্ন অঞ্চলে রণপায়ে হাঁটার প্রচলন রয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ইজ্জতপুরের হানিফ মিয়ার রণপায় হাঁটা শেখার একটি স্কুলও রয়েছে। যেখানে নিত্যদিনই প্রশিক্ষণ চলছে।
যারা রণপায়ে হাঁটেন তাদের বলা হয় রণপাশিল্পী। বর্তমান সময়ে রণশিল্পীদের দেখা খুব কমই মেলে। তবে সম্প্রতি ভারতের আসামে এক সারিতে ৭২১ জন রণপায় হেঁটে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়েন। সেখানে এখনও এই ঐতিয্যকে ধরে রেখেছে।