শবে বরাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলোর একটি। যা হিজরি ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে উদযাপন করা হয়। এটি "লাইলাতুল বরাত" নামেও পরিচিত। যার অর্থ হলো মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, রহমত বর্ষণ করেন এবং তাকদিরের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
শবে বরাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নফল নামাজ, দোয়া, তাসবিহ-তাহলিল এবং নফল রোজা রাখা। অনেকে এই দিনের রোজাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং এটি পালন করাকে বরকতের কাজ বলে মনে করেন।
শবে বরাতের রোজার রাখার ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি রোজা রাখতেন।
হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, "আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।" (বুখারি, মুসলিম) এটি প্রমাণ করে যে শাবান মাসের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং শবে বরাতের রোজা রাখা একটি ভালো আমল।
শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং পরবর্তী বছরের তাকদিরের ফায়সালা করেন। তাই এই দিনের রোজা রাখা অতিরিক্ত ইবাদতের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও রোজা মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে, গুনাহ মাফের পথ প্রশস্ত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে। পাশাপশি শাবান মাসের রোজা রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। এতে শরীর ও আত্মা রমজানের জন্য অভ্যস্ত হয়ে যায়।
শবে বরাতে রোজা রাখার নিয়ম
শবে বরাতের রোজা রাখা সুন্নত বা ওয়াজিব নয়, তবে এটি একটি মুস্তাহাব (উত্তম) আমল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন, বিশেষ করে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখার সুপারিশ করেছেন। তাই যারা শবে বরাতের রাতে ইবাদত করেন, তারা পরদিন অর্থাৎ ১৫ শাবান নফল রোজা রাখতে পারেন।
রোজার নিয়ত করার নিয়ম
রোজার জন্য নিয়ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোজার নিয়ত মূলত অন্তরের ইচ্ছা দ্বারা সম্পন্ন হয়, তবে মুখে উচ্চারণ করাও উত্তম। নিয়ত হতে হবে –
"নাওয়াইতু আন আসুমা গাদাল লিল্লাহি তাআলা"....(অর্থ: আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করলাম)।
সাহরি খাওয়ার নিয়ম
সাহরি খাওয়া সুন্নত এবং এটি ফজরের কিছুক্ষণ আগে খাওয়া উত্তম। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “সাহরির খাবারে বরকত রয়েছে, তাই সাহরি খাও।” (বুখারি, মুসলিম) সাহরি দেরি করে খাওয়া উত্তম, তবে ফজরের আজানের আগে অবশ্যই শেষ করতে হবে।
ইফতারের নিয়ম
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ইফতার করা সুন্নত।ইফতারের আগে দোয়া পড়া উত্তম –
"আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতরতু"....(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি, তোমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তোমার ওপর ভরসা করেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি)।
শবে বরাতের রোজার বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা
অনেকে মনে করেন যে, ১৫ শাবানের রোজা ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয়। এটি একটি ভুল ধারণা। এই রোজা নফল এবং এটি রাখা না রাখার স্বাধীনতা রয়েছে।
শবে বরাতের রাতের ফজিলত সম্পর্কে কিছু সহিহ হাদিস পাওয়া গেলেও, এই দিনের রোজা রাখা সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট সহিহ হাদিস নেই। তবে শাবান মাসে বেশি রোজা রাখার সুন্নত রয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এই দিনের রোজার সঙ্গে বিশেষ কোনো দোয়া বা আমল জুড়ে দিতে হবে। কিন্তু ইসলামে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি স্বাভাবিক নফল রোজার মতোই পালন করতে হবে।