• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যেভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন


অতনু সাহা
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৩:১২ পিএম
যেভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন

রাগ, মানুষের হাসি-কান্নার মতোই আবেগের একটি প্রকাশ। কেউ পান থেকে চুন খসলেই রেগে যান, তো কেউ দীর্ঘ সময়ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আবার কেউ নিজের ওপর রাগ করেন, তো কেউ অন্যের ওপর। তবে একেবারেই রাগ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। যাই হোক, রাগ যার ওপর করেন বা যে কারণেই করেন, ক্ষতি কিন্তু নিজেরই হয়। তাই রসিকতা করে বলা হয়, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’।

কথাটি রসিকতার ছলে বললেও মিথ্যা নয়। চিকিৎসকদের মতে, রাগ মানসিক চাপ বাড়ায়। যা শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রাগ করলে আমরা অনেকেই চিৎকার করি। এতে হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়। যা ডেকে আনতে পারে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক। রাগের কারণে কমে যেতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলে শরীরে বিভিন্ন ব্যাধি বাসা বাঁধবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এছাড়া মাথা ব্যথা, উদ্বেগ, অনিদ্রা, ত্বক ও হজমের সমস্যায় ভোগার শঙ্কাও কম নয়।

রাগের বশে অনেকে আবার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন, খারাপ আচরণ করেন অন্যদের সঙ্গে। গ্রহণ করেন ভুল সিদ্ধান্ত। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো হয়ই। পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ও জীবনে ব্যর্থতার গ্লানি বাড়তে থাকে। তাই জীবনকে আরও সুন্দর করতে ও সাফল্যমণ্ডিত করতে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য নিচের কাজগুলো করতে পারেন—

স্থান পরিবর্তন

যখন কারও আচরণে বা কাজে আপনার রাগ আসবে, তখন বিপরীত পাশের মানুষটির সামনে থেকে সরে যাওয়াই শ্রেয়। কারণ যার ওপর রেগে আছেন, তার সামনে থাকলে রাগ আরও বাড়বে। তাই কারও ওপর রাগ এলে যত দ্রুত সম্ভব তার সামনে থেকে সরে যান। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার রাগ অনেকটাই কমে যাবে।

কথা না বলার চেষ্টা করুন

কথায় আছে, কথায় কথা বাড়ে। ছন্দে বলা এই কথাটি একটুও মিথ্যা নয়। রাগের সময় আপনি বিপরীত পাশের মানুষের সঙ্গে যত তর্ক করবেন, ততই তর্ক বাড়বে। রাগের চোটে বলে ফেলতে পারেন অপ্রত্যাশিত কথাও। তাই যতটা সম্ভব রাগের সময় কথা না বলার চেষ্টা করুন। পারলে মুখে একেবারে তালা দিন। দেখবেন, বিপরীত পাশের মানুষটি এক সময় তর্ক করা বন্ধ করে দিয়েছে। আপনিও বেঁচে গেলেন বেফাঁস কথা বলার হাত থেকে।

নিজেকে শান্ত রাখুন

রাগের সময় শরীরের রক্ত চলাচল ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। তাই রাগের সময় যতটা সম্ভব শরীরকে শান্ত ও শীতল রাখুন। এ জন্য চোখ, কান বন্ধ করে জাগতিক সবকিছু থেকে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতে পারেন। হেঁটে আসতে পারেন শান্ত, স্নিগ্ধ, সবুজে ঘেরা কোনো স্থান থেকে। চাইলে কানে হেডফোন গুঁজে ডুবে যেতে পারেন সুরের মূর্ছনায়। ধ্যানও কিন্তু শরীর ও মনকে শান্ত করার কাজ করে। এতে শুধু রাগই কমে না, শক্তিশালী হয় ব্যক্তিত্বও।

প্রতিদিন শরীর চর্চা করুন

প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য শরীরচর্চা করলে শরীর ও মন দুই-ই ভালো থাকে। এতে হুট-হাট করে রেগে যাওয়ার প্রবণতা কমার পাশাপাশি রাগের সময় নিজের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা বাড়ে। তাই প্রতিদিন সকাল বা বিকেলে শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

রাগের সময় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ বেশিরভাগ সময় মানুষ রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই যে কোনো কাজে রাগ কমলেই সিদ্ধান্ত নিন। কোনো কিছু বলার আগেও কয়েকবার ভাবুন।

রাগ নিয়ন্ত্রণের চর্চা করুন

মানুষ চাইলে কী না করতে পারে। এই কথার সত্যতা প্রমাণের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ মানুষ চাইলে আসলেই সব করতে পারে। তাই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চর্চা করুন। একদিনে সাফল্য না এলেও, একদিন ঠিকই আসবে। এ জন্য রাগের সময় প্রিয় কোনো মুখ বা স্থানের কথা ভাবতে পারেন। গুনতে পারেন সংখ্যাও।

মনোবিজ্ঞানী বা পরিচিতদের সাহায্য নিন

চেষ্টার পরও যদি রাগ কমাতে না পারেন, তাহলে মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে পারেন। কথা বলতে পারেন পারেন পরিচিতদের সঙ্গেও। মনে রাখবেন, রাগে আপনারই ক্ষতি।

রাগ নিয়ন্ত্রণ যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি মনের মধ্যে রাগ পুষে না রাখা। কারণ রাগ মনের মধ্যে পুষে রাখলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিতও হতে পারে। তাই মনের মধ্যে রাগ পুষে না রেখে নিজের বক্তব্য সরাসরি বলে দিন। তবে চেষ্টা করুন যতটা বিনয়ের সঙ্গে বলা যায়। এতে লাভ আপনারই।

Link copied!