আপনি অফিসের বস বা বড় কর্মকর্তা যেই হোন না কেনো? চাকরি জীবনে উন্নতি করতে হলে শুধু দক্ষতা এবং কাজের মানই যথেষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠান যেহেতু একটি কাঠামো এবং মানুষই এখানে একত্রিত হয়। তাই ব্যক্তিত্বের একটা স্বাভাবিকত্বও এখানে আছে। তাই কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারের দিকেও সতর্ক থাকতে হবে। এই সতর্কতা ব্যতীত আপনি চাকরিক্ষেত্রে নিজের নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারবেন না।
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আপনার জন্য কিছু পরামর্শ।
কোরাম যেন না হয়
প্রায় সব অফিসেই পক্ষপাতিত্ব বা কোরাম লক্ষ্য করা যায়। তবে এমনটা সচরাচর অফিসের পরিবেশে বোঝা যায় না। এমন কিছুতে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আপনার নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। কাজের বাইরে অন্য কিছু নিয়ে না ভাবাই ভালো। সহকর্মীরা যদি আপনার কাজের আওতায় কিছু সাহায্য চায়, অবশ্যই করবেন। তবে কারও খুঁত খুঁজে নালিশের খোঁজ করবেন না। এটা দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার গ্রাফের জন্য ক্ষতি।
অফিসে কাজের বাইরে কথা বলা থেকে বিরত থাকা
অফিস হচ্ছে কাজের জায়গা। এখানে সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে, একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে অনেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু ভালো সম্পর্ক এই নয় যে, কাজ বাদ দিয়ে গল্প বা পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
কারও সঙ্গে মন দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
অফিসে কাউকে ভালো লাগতেই পারে। সেটা পরিণয়েও যেতে পারে। কিন্তু যদি একেবারেই আপনাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এমন সম্পর্ক পরিণত হওয়ার আগেই খোলাসা হয়ে যাওয়া ভালো। যে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোনো রূপ নেয় না, সেটিকে লালনের মাধ্যমে সমস্যাই বাড়ে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
নিজের কাজের কথা ভাবুন, অসামাজিক হবেন না
নতুন অফিসে ঢুকেছেন। প্রতিষ্ঠানটিও নতুন হতে পারে। এসময় আপনার মাথায় থাকবে নিজেকে প্রমাণ করা। কিন্তু কাজ তো আর একা একা হয় না। অন্যদের সঙ্গে নিজের সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। একটা দল হয়ে কাজ করতে হয়। অনেকে মনে করেন নিজের কাজ নিয়েই থাকব। এভাবে তারা অসামাজিক হয়ে থাকেন। তখন দেখা যায়, অন্যরা জরুরি কাজ বাদে সচরাচর আপনাকে ঘাঁটান না। কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য তা ভালো নয়। সেজন্য সবার সঙ্গেই ভাব জমান। সামাজিক সৌজন্যটুকু রাখুন। সবার সঙ্গেই হাসিমুখে থাকুন। টুকিটাকি খোঁজ নিন। নিজেকে পরিচিত করুন সবার কাছে।
সংযত সুরে কথা বলুন
আপনি আমুদে বা বদরাগী। আবার আপনি ভীষণ চুপচাপ। আপনার চরিত্রে যেকোনো বৈশিষ্ট্যই থাকতে পারে। তবে অফিসে আপনার স্বকীয়তা না হারিয়েও এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা যেতে পারে। অফিসে উচ্চ সুরে কথা বলবেন না। কারণ কাজের পরিবেশে অনেকের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটলে তারা বিরক্ত হতে পারেন। দূর থেকে অনেকে বিরক্ত হন আসল ঘটনা না বুঝে। এটা ভালো নয়। কেউ যেন আপনাকে ভুল না বোঝে।
মনোমালিন্য হলে মিটমাট, নালিশে বরবাদ
অফিসে অনেক সময় সহকর্মীর সঙ্গে বাজে অভিজ্ঞতা বা মনোমালিন্য হতেই পারে। তবে এই মনোমালিন্যকে পুঁজি করা ঠিক না। যেমনটা বলেছি, অফিসে কোরাম তৈরি হয়। সবাই কোরামে থাকে এমন না। কিন্তু আপনি কষ্ট পেলে অন্য অনেকের কাছে বলতে পারেন। অথবা সোজা বসকেই জানালেন। এমনটা করলে নানাদিকেই নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
সহযোগিতাই সব
প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা এই দুইয়ের মধ্যে কোনটিকে ভালো বলবেন? নৈতিকভাবে অনেকে হয়তো সহযোগিতা বলবেন। কিন্তু সবাই মনে মনে প্রতিযোগিতাই বাছবেন। কিন্তু সহযোগিতাই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে ভালো পথ। কারণ আপনার কাছে সব সহকর্মী যদি নিরাপদ অনুভব করে তারা আপনাকে নিয়ে নালিশ করার সুযোগ পাবে না। তাই সহযোগী হোন। এটা ভালো। দক্ষতা ও ব্যক্তিত্ব থাকলে সবই সম্ভব।