• ঢাকা
  • শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৩ শা'বান ১৪৪৬

ভাষার চেতনা শিশুদের মধ্যে কীভাবে জাগ্রত হবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
ভাষার চেতনা শিশুদের মধ্যে কীভাবে জাগ্রত হবে
ছবি: সংগৃহীত

ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির পরিচয় ও সংস্কৃতির মূল ভিত্তি। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা গড়ে তোলার জন্য শিশুদের মধ্যে ভাষার চেতনা জাগ্রত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের যদি ছোটবেলা থেকেই ভাষার গুরুত্ব বোঝানো হয়, তবে তারা ভবিষ্যতে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু এই চেতনা কীভাবে শিশুদের মধ্যে গড়ে তোলা যায়?

পরিবার থেকে ভাষার শিক্ষা শুরু করা
শিশুর প্রথম ভাষা শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। তাই অভিভাবকদের দায়িত্ব শিশুর ভাষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা। শিশুর সঙ্গে প্রথম থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলা উচিত। অনেক পরিবারে শিশুর সঙ্গে ইংরেজি বা অন্য ভাষায় কথা বলা হয়, যা তার মাতৃভাষার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলায় গল্প বলা, গান ও ছড়া শেখানো

ছোটদের জন্য বাংলা রূপকথা, উপকথা বা ঐতিহ্যবাহী গল্প শোনালে তারা ভাষার সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে। যেমন—ঠাকুরমার ঝুলি, সুকুমার রায়ের ছড়া, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ইত্যাদি।
ছোটবেলায় শিশুকে বাংলা ছড়া ও গান শেখালে তাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
শিশুর ভাষা শেখার ক্ষেত্রে স্কুলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষা শিক্ষাকে আরও আনন্দদায়ক করতে পাঠ্যক্রমে গল্প, কবিতা, নাটক ও সৃজনশীল লেখা যুক্ত করা উচিত। অনেক শিশু বাংলা উচ্চারণ ও বানানে ভুল করে। তাই শিক্ষকদের উচিত তাদের শুদ্ধভাবে কথা বলা ও লিখতে শেখানো। স্কুলে ভাষা দিবস, বইমেলা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, বাংলা ভাষার ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন করলে শিশুদের মধ্যে ভাষার গুরুত্ব বাড়বে।

বাংলা সাহিত্য ও বই পড়ার অভ্যাস

শিশুরা যদি ছোটবেলা থেকেই বাংলা বই পড়তে শেখে, তবে তাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে। ছোটদের জন্য ছড়া, গল্প ও কমিক্স আকর্ষণীয় হতে পারে, যেমন—সুকুমার রায়, লীলা মজুমদার, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা। পড়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকরা যদি শিশুকে বই উপহার দেন ও পড়ার জন্য উৎসাহ দেন, তবে তারা বই পড়ায় আগ্রহী হবে। এছাড়াও  শিশুদের নিয়মিত লাইব্রেরি বা বইমেলায় নিয়ে গেলে তারা বইয়ের জগৎ সম্পর্কে আরও জানতে পারবে।

সংস্কৃতি ও বিনোদনের মাধ্যমে ভাষার চর্চা
শুধু বই পড়ে নয়, ভাষার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে শিশুকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত করা দরকার। বাংলা ভাষার ওপর নির্মিত শিশুদের উপযোগী নাটক, সিনেমা ও গান শুনলে তাদের ভাষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। শিশুকে লোকগান, পুতুলনাচ, যাত্রা ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত করানো উচিত, যাতে তারা বাংলার ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিশুকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া, ভাষা শহীদদের গল্প বলা এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে ভাষার গুরুত্ব বোঝানো যায়।

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার
আজকের শিশুরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাষা শেখার সুযোগ পাচ্ছে। তবে সঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে হবে। শিশুরা অনেকেই ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখে, যা ভাষার শুদ্ধতার জন্য ক্ষতিকর। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের বাংলা কিবোর্ড ও বাংলা লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা। ইউটিউব, অ্যাপ, গেম ও অডিওবুকের মাধ্যমে শিশুরা ভাষা শিখতে পারে। বাংলা গল্প, ছড়া ও শিক্ষামূলক কার্টুন তাদের ভাষার প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে পারে। বড়রা বাংলা ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা ভাষার প্রচার করলে শিশুরাও বাংলা লেখায় অনুপ্রাণিত হবে।

বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা ও সংরক্ষণ

শিশুদের শুধু ভাষা শেখালেই হবে না, তাদের ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা করার জন্য সচেতন করাও জরুরি। অনেক সময় ছোটরা ভুল বানানে বা ভাঙা বাংলায় কথা বলে, যা ভবিষ্যতে ভুলের অভ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই তাদের শুদ্ধভাবে কথা বলা ও লিখতে শেখানো জরুরি। ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষা শেখা দরকার, তবে মাতৃভাষাকে অবহেলা করা উচিত নয়। শিশুদের শেখানো দরকার যে বাংলা তাদের প্রথম পরিচয়, আর অন্য ভাষা শেখা একটি দক্ষতা।ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ভাষার প্রতি আগ্রহী করে তুললে ভবিষ্যতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Link copied!