ডিজিটাল যুগে এখন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, ভাই বোনদের সঙ্গে গ্রুপ চ্যাট সবই সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমেই হচ্ছে। ঘরে বসে বিশ্বের খবর জানা, কিংবা কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটাও হচ্ছে এখানেই। বিশেষ করে জনপ্রিয় ফেসবুক তো হয়ে উঠেছে বেচা কনার অন্যতম মাধ্যম। ফেসবুকে ‘মার্কেটপ্লেস’নামে আলাদা ক্যাটাগরিও রয়েছে। যেখান থেকে পণ্য বেচা এবং কেনা যায় সহজেই।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস পণ্য বেচাকেনার দারুণ মাধ্যম। সব বয়সীদের কাছেই এই মাধ্যম এখন বেশ পরিচিত। পোশাক, স্মার্টফোন, ঘরের আসবাব, মেকআপ, সুগন্ধি পণ্য, শৌখিন পণ্যসহ প্রায় সব রকম পণ্যই কেনাকাটা করা যায় এখান থেকে। ফেসবুকের তথ্য মতে, ২৫ কোটির বেশি ভার্চ্যুয়াল দোকান রয়েছে ফেসবুকে। সেখান থেকে প্রতি মাসে ১০০ কোটির বেশি কেনাকাটা হচ্ছে।
ফেসবুকের এই মাধ্যম যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি নিরাশও করেছে। মার্কেটপ্লেস থেকে পণ্য কিনে প্রতারিতও হচ্ছে গ্রাহক। ভালো মানের পণ্য দেখিয়ে খারাপ পণ্য ভোক্তাকে পৌছে দিচ্ছে বিক্রেতারা। যার দরুণ প্রতারণার শিকার হচ্ছে অগণিত ভোক্তা। তাই ভার্চ্যুয়াল বাজারে কেনাকাটায় ক্রেতাকে বিশেষ সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম থেকে কোনো পণ্য কেনাকাটার সময় প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু নির্দেশনা বা কৌশল জানতে হবে। যেমন_
· ফেসবুকে যে অ্যাকাউন্ট থেকে পণ্য কিনছেন তা আসল কি না দেখে নিন। ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রির জন্য় বিক্রেতার অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। অনেক সময় বিক্রেতা নকল প্রোফাইল দিয়ে পণ্য বিক্রি করে। সেক্ষেত্রে পণ্য কিনে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অ্যাকাউন্ট আসল না নকল তা দেখে নিন। পণ্য কেনার জন্য বার্তা পাঠানোর আগে বিক্রেতার তথ্য যাচাই করুন। প্রোফাইলে ছবি ও তথ্য না থাকলে সেখান থেকে পণ্য কিনবেন না। সেই অ্যাকাউন্টে ভুলেও নিজের তথ্য শেয়ার করবেন না। এতে বিপদও হতে পারে।
· ফেসবুকে বেশি দামের পণ্যও কমে বিক্রি হয়। যা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। যেমন ১ লাখ টাকার আইফোন ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যা দেখে ক্রেতার আগ্রহ বাড়ে। কোনো কিছু না ভেবেই অর্ডার করে বসেন। আর ভেজাল বা পুরোনো ফোন ঘরে এসে পৌছায়। ক্রেতা কিছুদিন ব্যবহারের পরই তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই সতর্ক থাকুন। বেশি দামের পণ্যে বেশি ছাড় পেলে তা কিনবেন না। কারণ সেখানে ভেজাল থাকবেই।
· ফেসবুকে বিক্রেতা পণ্যের যে ছবি দিচ্ছে বা পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে সেগুলো গুগল ইমেজে যাচাই করে দেখুন। অন্য কারও ছবি ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করলে সেখানে ভেজাল থাকতে পারে। আবার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ওই বিক্রেতা একই তথ্য ও ছবি প্রকাশ করে। সেক্ষেত্রেও দেখে কিনুন।
· ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে কেনাকাটার সময় বিক্রেতার মোবাইল নম্বর দেওয়া রয়েছে কিনা তা দেখুন। বিক্রেতার তথ্য জানতে ট্রু কলারের মতো অ্যাপের সহযোগিতা নিতে পারেন। পুরোনো বিক্রেতা হলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাদের নম্বর পেয়ে যাবেন। সেখান থেকেও বিক্রেতার পণ্য কেমন হবে তার ধারণা নিতে পারেন।
· পণ্য কেনার সময় বিক্রেতা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে আলাপ চালাতে অনুরোধ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে পণ্য কিনতে চাইলে অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি যাচাই করে নিন।
· ফেসবুকে কোনো পণ্য কেনার জন্য় অগ্রিম টাকা দেওয়ার আগে সতর্ক থাকুন। এতে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পণ্য হাতে পাওয়ার আগে বিক্রেতা টাকা চাইলে তাতে ভরসা না করাই ভালো। অনেকে অর্ধেক মূল্য বা কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলে এবং পরে ভেজাল পণ্য দিয়ে প্রতারণা করে। তাই সেই সুযোগ দিবেন না। পণ্য হাতে পেয়েই যাচাই করে এরপর মূল্য পরিশোধ করুন।
· ফেসবুক থেকে ব্র্যান্ডের পণ্য কোনো বিক্রেতার মাধ্যমে না কেনাই ভালো। বরং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করুন। এতে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
· পণ্য কেনার আগে বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। ম্যাসেজের মাধ্যমে কিংবা ফোনে পণ্যের বিস্তারিত জেনে নিন। প্রয়োজনে সঠিক পণ্যটির ছবি পাঠাতে বলুন। এরপর অর্ডার কনফার্ম করুন।
· বেশি দামের পণ্য কিনতে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করুন। নগদ অর্থ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টের তথ্য আপনার কাছে থাকবে।
সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ