• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

পয়লা বৈশাখে হালখাতার রীতি যেভাবে এলো


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম
পয়লা বৈশাখে হালখাতার রীতি যেভাবে এলো
ছবি: সংগৃহীত

বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস। এই দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দেশজুড়ে উত্সবের আমেজ থাকে।  ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের কাছেও  দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনেই খোলা হয় হালখাতা। দিনটি একাধারে আর্থিক হিসাব চুকানোর উৎসব। আবার এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সামাজিক মিলনমেলা। বৈশাখে হালখাতার প্রথা আজও বাংলার শহর, গ্রাম কিংবা বাজারে পুরোদমে পালিত হয়। যা বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

হালখাতার ধারণা যেভাবে এলো
"হালখাতা" শব্দটি ফারসি ‘হাল’ (নতুন) ও ‘খাতা’ (হিসাবের খাতা) শব্দ থেকে এসেছে। অর্থাৎ, এটি মূলত নতুন হিসাব খাতার সূচনা। হালখাতার প্রচলন শুরু হয় মূলত মোগল আমলে। তখনকার ব্যবসায়ীরা বাংলা নববর্ষের দিনে পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ করে নতুন খাতা খুলতেন, যাতে বছরের শুরু থেকেই নতুনভাবে দেনা-পাওনার হিসাব রাখা যায়। সেই সময়ই নববর্ষের দিনে দোকান পরিষ্কার, খাতা বদলানো, ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করানো এবং পূজার মাধ্যমে শুভ সূচনা করার রীতির সূচনা হয়। এই প্রথা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম, সংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থার সঙ্গে মিশে যায় এবং সামাজিক উৎসবে রূপ নেয়।

হালখাতার আয়োজন

হালখাতা একটি দিনের জন্য পালিত হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে যারা বছরের পুরনো দেনা-পাওনার হিসাব চুকাতে চান, তারা নববর্ষকে কেন্দ্র করে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। তাই বেশ ঘটা করেই হালখাতার আয়োজন করা হয়।

দোকান পরিষ্কার ও সাজসজ্জা
হালখাতার আগের দিন থেকেই দোকান ঘর পরিষ্কার করা হয়। নতুন রঙ করা, আলপনা আঁকা, ফুল, বাতি, পতাকা দিয়ে দোকান সাজানো হয়। অনেক দোকানে ঐতিহ্য অনুযায়ী নতুন খাতা বাঁধিয়ে তার প্রথম পাতায় ‘শুভ হালখাতা’ লিখে লাল রঙে অলংকরণ করা হয়।

পূজা-অর্চনা
অনেক ব্যবসায়ী দিনটি শুরু করেন গণেশ ও লক্ষ্মী পূজা দিয়ে। গণেশকে জ্ঞানের দেবতা ও লক্ষ্মীকে সম্পদের দেবী হিসেবে মানা হয়। তাই ব্যবসার শুভ সূচনা করতে তারা এই পূজা করেন। বিশেষ করে হিন্দু ব্যবসায়ীরা সকালে মন্ত্রপাঠ ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে হালখাতা শুরু করেন।

খাতা বদল ও হিসাব চুকানো
পুরনো খাতা বন্ধ করে নতুন খাতা খোলা হয়। এই সময় ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানান এবং পুরনো দেনার হিসাব মিটিয়ে নতুন করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ার আহ্বান জানান।

আপ্যায়ন ও উপহার
হালখাতায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো ক্রেতা আপ্যায়ন। দোকানে আসা পুরোনো ক্রেতাদের মিষ্টি, শরবত, ফলমূল, চা-নাশতা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ছোটখাটো উপহারও দেওয়া হয়, যেমন—ক্যালেন্ডার, কলম, খাতা বা দোকানের ব্র্যান্ডের ব্যাগ।

হালখাতার সঙ্গে হিন্দু ধর্মীয় কিছু আচার-অনুষ্ঠান জড়িত। তবে মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীরাও এই উৎসবকে একটি সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক পরম্পরা হিসেবে পালন করেন। তারাও ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ ও আপ্যায়নের মাধ্যমে এই রীতিকে ধরে রেখেছেন।

হালখাতা বাঙালি সমাজে ব্যবসায়িক সম্পর্ক, আন্তরিকতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। বৈশাখে হালখাতার আয়োজন নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার অনুপ্রেরণা দেয়।

Link copied!