বাঙালির বারো মাসে তের পার্বন। সারাবছরই যেন উত্সব লেগেই থাকে। বছরের প্রথমেই শুরু হয় দোল পূর্ণিমা দিয়ে। ফাল্গুন মাসেই উদযাপন হয় এই উত্সব। হিন্দু ধর্মাম্বলীরা এই উত্সবে নেচে গেয়ে রঙের খেলায় মেতে উঠে। ২৫ মার্চ দোল পূর্ণিমার উত্সবে মেতে উঠেছে হিন্দু ধর্মাম্বলীরা।
এই দিন রঙের উত্সবে কমবেশি সবাই মেতে উঠেন। বিশেষ এই দিনটিতে পূজাও হয়। এদিন রাধা কৃষ্ণের পূজা করা হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীনৗদের সঙ্গে রং খেলায় মেতে উঠেছিলেন। সেই থেকেই হিন্দু ধর্মে আবির খেলায় মেতে উঠার রীতি চালু হয়। এদিকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চালু করেছিলেন বসন্ত উত্সব। যেখানে রঙের খেলায় মেতে উঠতেন ছোট বড় সবাই। তাই বসন্ত আর দোল পূর্ণিমার আনন্দে আবির খেলা প্রতিবছরই উদযাপন হয় হিন্দু ধর্মাম্বলীদের ঘরে ঘরে।
দোলযাত্রা- হোলির শুরু যেভাবে
ঝাঁসির বুন্দেলখ.বুন্দেলখন্ডের আর্চ শহর থেকে দোল পূর্ণিমায় রঙের এই উৎসব প্রথম শুরু হয়। এক সময় রাজা হিরণ্যকশ্যপের রাজত্ব ছিল সেখানে। দৈত্যরাজের ছেলে প্রহ্লাদ ও তার বোন হোলিকার বিশেষ একটি ঘটনার থেকেই হোলির উৎসব শুরু হয়। ঝাঁসির সদর দপ্তর থেকে আর্চ শহরটি প্রায় ৭০ কিমি দূরে। এখানেই প্রথম দোল পূর্ণিমায় রং খেলার সূচনা হয়।
পুরাণ অনুযায়ী, দৈত্যরাজ হিরণ্যকশ্যপের রাজধানী ছিল এই আর্চ। তিনি একটি বর পেয়েছিলেন যে, কোনও পশু বা মানুষ তাকে মারতে পারবে না কখনও এবং দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হবে না। নিজেকে অমর মনে করে প্রচণ্ডভাবে দৃপ্ত ও উজ্জীবিত হন তিনি। হিরণ্যকাশ্যপ স্বৈরাচার নিয়ম-কানুন করে রাজ্য শাসন করা শুরু করেন। তার ছেলে প্রহ্লাদ পরম বিষ্ণুভক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন ঘোর বিষ্ণুদ্বেষী। ফলস্বরুপ হিরণ্যকশ্যপ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন প্রহ্লাদের প্রাণনাশের। কিন্তু বিষ্ণুর আশীর্বাদে তার কোনও ক্ষতি হয় না। এরপর এই প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন হিরণ্যকাশ্যপের বোন হোলিকা। সেই উদ্দেশে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেন তিনি। হোলিকা ভেবেছিলেন, তিনি তার মায়াবী ক্ষমতাবলে বেঁচে যাবেন এবং পুড়ে ছাই হয়ে যাবে প্রহ্লাদ। কিন্তু আসলে হয়েছে তার উল্টোটাই। বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগেনি এবং আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় কাশ্যপ কন্যার।
প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর হোলিকা বধকে উদযাপন করা হয় এভাবেই। এরপরই ভগবান বিষ্ণু নরসিংহ অবতার ধারণ করে হিরণ্যকাশ্যপকে দিন ও রাতের সন্ধিকালে নখ.রাতের সন্ধিকালে নখ দিয়ে রক্তাক্ত করে ধ্বংস করেন। বর্তমানে শুধু বুন্দেলখন্ড নয়, সব দেশেই হোলিকা দহনের রীতি পালিত হয়।
প্রতি বছর নাচে-গানে আনন্দের সঙ্গে এই উৎসব উদযাপন করেন আর্চের লোকেরা । মনে করা হয়, সেখান থেকেই উৎপত্তি এই উৎসবের।