পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতেই পবিত্র শবে বরাত। মুসলিম ধর্মপ্রাণদের জন্য উত্তম একটি রাত। যে রাতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নফল ইবাদত করা হয়। দিনব্যাপী থাকে নানা আয়োজন। এরপর সন্ধ্যায় অন্ধকার নামলেই শুরু হয় শবে বরাতের নফল ইবাদত। রাতভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকে মুসলিমরা। এরপর ভোরে ফজর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শেষ হয় ইবাদত।
শবে বরাত উপলক্ষে মুসলিম পরিবারের ঘরে ঘরে নানা আয়োজন হয়। খাওয়া-দাওয়ায় থাকে বিশেষ আয়োজন। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে হরেক পদের হালুয়া আর রুটি। নিজেদের জন্য তো বটেই, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতেও হালুয়া-রুটি বিতরণ করার রীতি রয়েছে। তবে এই রীতি কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গের অংশ নয়। বরং প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পবিত্র এই দিনটির আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াই থাকে মূল উদ্দেশ্য।
ইতিহাসবিদরা জানান, মূলত মিষ্টি অর্থেই হালুয়ার প্রচলন হয়। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে শবে বরাত পালন শুরু হয় ১৯ শতকের শেষে। ঢাকার নবাবরা বিশাল আয়োজনে শবে বরাত পালন করতেন। বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা করা আর মিষ্টি বিতরণ ছিল এরই অংশ। ওই সময় মিষ্টি বানানোর হতো বাড়িতেই। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে বিশেষভাবে হালুয়া তৈরির প্রচলন শুরু হয়। এরপরই বাংলার মাটিতে হালুয়া-রুটি বানানোর রীতি হয়ে আসছে।
ইতিহাসবিদরা আরও জানান, নবাবদের আধিপত্য, মুসলমানদের আধিপত্য এবং ধর্ম পালন এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে প্রকাশ করতেই শবে-বরাতে বড় ধরনের উৎসবের আয়োজন হতো। এছাড়াও পাকিস্তান আমলে শবে বরাতের দিন সরকারি ছুটি যুক্ত হয়। এতে আয়োজনের ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে খাবারের আয়োজনে মিষ্টি পদ রাখতেই হালুয়ার প্রচলন শুরু হয়।
এছাড়াও রাসুলল্লাহ (সা.) মিষ্টি খাবার খুব পছন্দ করতেন। তার উম্মতরাও মিষ্টি খাবার পছন্দ করেন। তার ধারাবাহিকতায় পবিত্র এই রাতে ইবাদতের সঙ্গে মিষ্টি পদ খাওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।