কলমের ব্যবহার সর্বত্রই হয়। অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ প্রায় সব স্থানেই কলমের ব্যবহার হয়। বর্তমান সময়ে এটি বেশ সহজলভ্য এবং কম দামী। অতীতে এর কদর ছিল অনেকে। শুধু ধনীরাই এটি ব্যবহার করতেন। অনেকটা বিলাসিতার উপকরণ ছিল এই কলম। যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে এটি সহজলভ্য হয়ে উঠে। ঘরে ঘরে এর ব্যবহার শুরু হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় অধিকাংশ স্থানেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হয়ে উঠে এই কলম।
বহুল ব্যবহৃত এই কলমের আবিষ্কার কবে, জানেন? প্রায় ৫ হাজার বছর পুরোনো এই কলমের ইতিহাস। প্রাচীন মিশরীয়রা সর্বপ্রথম এর ব্যবহার শুরু করেন বলে জানা যায়।
ইংরেজি ‘পেন’ শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে কলম। যা ল্যাটিন শব্দ পেন্না থেকে এসেছে। এর অর্থ পাখির পালক। প্রাচীন যুগে পাখির পালক ব্যবহার করেই লেখার কাজ হতো। সেই স্থানেই জায়গা করে নিয়েছে কলম। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হলেও কলমের কদর কমেনি। বরং গুরুত্বপূর্ণ কাজে এখনো কলম ব্যবহার হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরীয়রা প্রথম কলম ব্যবহার শুরু করে। সে সময় লেখালেখি করা হতো বিভিন্ন গাছের পাতা, বাকল এবং পশুর চামড়ার উপরে। কলম হিসেবে ব্যবহার হতো নলখাগড়া, বাঁশের কঞ্চি অথবা ফাঁপা খন্ড। এসব খন্ড কলমের মতো করে কেটে সূচালো করা হত। সূচালো অংশটি কালির মধ্যে চুবিয়ে লেখা হতো। বিভিন্ন গাছের রস এবং বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে কালি প্রস্তুত করা হতো।
প্রথমাবস্থায় নলখাগড়া জাতীয় কলমের ব্যবহার শুরু হয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীন মিশরীয়রা কাঠির ডগায় তামার নিবের মতো বা ধাতব কিছু একটা লাগিয়ে লেখালেখি করতেন। মধ্যযুগের পরে কাগজ শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়। পাখির পালকের ব্যবহার শুরু হয়। রাজহাঁসের পালক ছিল সে যুগের কলম তৈরির প্রধান উপকরণ। লেখার সুবিধার্থে পালকের মাথা সূক্ষ্মভাবে সূচালো করা হতো। প্রাচীনকালে পাহাড়ের গুহায় বাস করা মানুষ গুহার দেয়ালে কোনো সূক্ষ্ম জিনিস দিয়ে ছবি আঁকতেন। অনেক সময় গাছের পাতার রস বা শিকারের রক্ত দিয়েও আঁকতেন। পাখির পালকের তৈরি কলমকে কুইল বলা হতো। নিব কলম এবং ঝর্না কলম ব্যবহারের আগে কুইল ছিল জনপ্রিয়।
উনিশ শতকের দিকে কালির কলমের পদ্ধতি চালু হয়। ওই সময় ফাউন্টেন পেনের উদ্ভাবন শুরু হয়। ১৯৩১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক এক মেলায় বল পয়েন্ট কলমের প্রদর্শন শুরু হয়। যা ব্যাপক আলোচিত হয়। সেই থেকে কলমের ব্যবহার সারাবিশ্বে ছাড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কলমের ডিজাইনের পরিবর্তনও হয়। মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে কলম সহজলভ্য করা হয়। যা বর্তমানে মানুষের ব্যবহারির জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।