• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রিয় বিস্কুটের উদ্ভব যেভাবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম
প্রিয় বিস্কুটের উদ্ভব যেভাবে
ছবি: সংগৃহীত

অতিথি আপ্যায়নে কিংবা বিকেলে চায়ের আড্ডার অন্যতম খাবার থাকে বিস্কুট। ছোট-বড় সবারই প্রিয় খাবার এটি। মিষ্টি কিংবা নোনতা যেকোনো বিস্কুটই খেতে মজা। বিস্কুট বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয়। অনেক দেশে এটি কুকিজ নামেও বেশি পরিচিত।

সাধারণত ময়দার মধ্যে চিনি, চকলেট, জাম, আদা বা দারুচিনির স্বাদ দিয়ে বেক করে বিস্কুট বানানো হয়। প্রিয় এই খাবারটি প্রথম কখন কোথায় খাওয়া শুরু হয়েছিল জানেন?

বিস্কুট শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ বিস ও ককটাস থেকে। বিস এর মানে হচ্ছে দুইবার। আর ককটাস এর অর্থ হচ্ছে রান্না করা। এই ধরণের নাম দেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। প্রথমদিকে বিস্কুট বানাতে দুই ধাপে বেক করা হতো। প্রথমে বেক করার পর আবারও তা স্লো ওভেনে সেঁকে নেওয়া হতো। ধীরে ধীরে বিস্কুট বানানোর পদ্ধতিতে বদল এসেছে। আধুনিক রন্ধনশিল্পীরা একবার বেক করেই বিস্কুট বানানোর পদ্ধতি বের করেন। যা এখন সহজেই বানানো যায়।

বিস্কুটের আবিস্কার কখন থেকে? মজাদার এই খাবারটির উদ্ভব হয় প্রাচীনকালেই। রোমান, গ্রিক ও মিশরীয় সাম্রাজ্যের বণিক এবং সামরিক কর্মীদের প্রিয় খাবারের মধ্যে ছিল বিস্কুট। তারা কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় সমুদ্রে থাকতেন। সমুদ্রে থাকাকালৗন তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালরির যোগান দেওয়ার মতো খাবারের প্রয়োজন ছিল। যা কিছুক্ষণ পরপর খাওয়া যাবে। আবার দ্রুত নষ্টও হবে না। সেই প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই ময়দা, চিনি দিয়ে কম আঁচে রুটি রান্না করা হতো। সেই রুটি থেকেই ধীরে ধীরে তা বিস্কুট বা কুকিজের আকারে আসে। মধ্যযুগে সমুদ্রের থাকা বণিক এবং সামরিক কর্মীদের প্রিয় খাবার হয়ে উঠে এই বিস্কুট।

শতাব্দী বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিস্কুট তৈরির প্রক্রিয়াও বদলে যায়। সপ্তম শতাব্দীতে পারস্যরা বিস্কুট তৈরি নিয়ে আরও গবেষণা করে। ময়দার সঙ্গে ডিম, মাখন ও ক্রিম অন্তর্ভুক্ত করে বিস্কুটের স্বাদ  আরও বাড়ানো হয়। এরপর বিস্কুটে যোগ হয় ফল ও মধু।

ইউরোপে বিস্কুটের আগমন হয় দশম শতাব্দীর শেষের দিকে। আর্মেনীয় এক সন্ন্যাসী ওই সময়  মধ্য এশিয়া থেকে ফ্রান্সে ভ্রমণে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বিস্কুট বা কুকিজের রেসিপি সবার মধ্যে বিতরণ করেন। সেই থেকে ইউরোপেও বিস্কুটের প্রচলন শুরু হয়।

১৮৩১ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি হান্টলি অ্যান্ড পামারস বিস্কুটের টিন উদ্ভাবন করে। সারা বিশ্বে শুরু হয় বিস্কুটের রপ্তানি। ১৯০০ সালের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায়। ওই সময় বিস্কুট বিশ্বের ১৭২টি দেশে বিক্রি হয়। এরপর ধীরে ধীরে আরব, পারস্য এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে বিস্কুটের  স্বাদ এবং প্রস্তুত প্রণালীতে পরিবর্তন আসে।

বিস্কুটকে ইংরেজদের অন্যতম খাবার ধরা হতো। তাই ভারতবর্ষে নিষিদ্ধ ছিল এটি। হিন্দু সমাজে বিস্কুটকে ‘অপবিত্র’ খাদ্য বলেও মনে করা হতো। কিন্তু ১৮৯৮ সালে দিল্লিতে ‘হিন্দু বিস্কুট কোম্পানি’ চালু হয়। যার উদ্দ্যোক্তা ছিলেন রাধামোহন। তবে ভারতবর্ষে বিস্কুট এবং চায়ের মিশেলের জনপ্রিয়তা বাড়ে ব্রিটিশ আমলে।‘দ্য বিস্কিট: দ্য হিস্ট্রি অব আ ভেরি ব্রিটিশ ইনডালজেন্স’ বইয়ের লেখক খাদ্য ইতিহাসবিদ লিজি কলিহাম বলেন, ‘গোয়া এবং পন্ডিচেরির বেকারিতে পর্তুগিজ এবং ফরাসি বিভিন্ন খাবার তৈরি হতো। ওই সময় ব্রিটিশদের দখলে থাকা প্রধান শহর কলকাতা, মাদ্রাজ এবং বোম্বেতে কেক এবং বিস্কুটের প্রচলন শুরু হয়। তবে ওই সময় বিস্কুট ছিল শুধুমাত্র অভিজাতশ্রেণির নাস্তার অংশ।

 

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

Link copied!