‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাত ময়দান। এর অর্থ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
আজ (১৫ জুন) সূর্যোদয় থেকে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করছে সারা বিশ্ব থেকে আগত লাখো মুসলমান। এসব মুসল্লিরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানেই অবস্থান করবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল রাতেই অনেকে মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতে অবস্থানই হলো হজ (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫)। বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশের ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের লক্ষ্যে এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৫ হাজার মানুষ।
এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেয়ার জন্য মসজিদুল হারামের জনপ্রিয় ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াকল আল মুয়াইকিলিকে নিযুক্ত করেছেন সৌদি বাদশাহ। একইসাথে মসজিদে নামিরাতে নামাজ পড়াবেন তিনি। তার প্রদত্ত সেই খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। তারা দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তারা হলেন— মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী ও মুবিনুর রহমান ফারুক এবং জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুস সাকিব। গত বছরও খুতবার অনুবাদ করেছিলেন এই চার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী।
এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বের ৫০টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের মানুষের কাছে হজ ও ইসলামের শান্তির বার্তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ৫০টি ভাষার মধ্যে অন্যতম হলো- বাংলা, ফরাসি, ইংরেজি, ফার্সি, উর্দু, হাউসা, রুশ, তুর্কি, পাঞ্জাবি, চীনা, জার্মান, সুইডিশ, ইতালিয়ান, মালায়ালাম, বসনিয়ান, ফিলিপিনো, মালয়, সোয়াহিলি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং আমহারিক ইত্যাদি। ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বের পাঁচটি আন্তর্জাতিক ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ প্রচার করা হয়।
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, হজের সময় মক্কার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি বা তার বেশি থাকতে পারে।
হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনে (মূলত ৯ জিলহজ) হজের নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা হজ।
হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে দূরে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়’ (বুখারি: ১/২০৬)।
কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন হাজিরা। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে মিনা। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।
পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো, মিনার জামারায় পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি ইত্যাদি হজের ইবাদত। এর প্রতিটি ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। এগুলোর সঙ্গে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানি, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা–বিশ্বাস, আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে।
জামারায় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজিদের পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিতে হয়। তারা আগামীকাল কোরবানি দেবেন। অধিকাংশ হাজি নিজে বা বিশ্বস্ত লোক দিয়ে মুস্তাহালাকায় (পশুর হাট ও জবাই করার স্থান) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে ৭২০ রিয়াল জমা দিয়ে কোরবানি দেন।
মৃত হাজির তালিকাসহ অন্যান্য তথ্য এই (hajj.gov.bd) ওয়েবসাইটে জানা যাবে।