পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই সময় ঘরে অতিথির আগমন ঘটে। অতিথিদের স্বাগত জানানো, সঠিকভাবে তাদের আপ্যায়ন করা এবং উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করা ঐতিহ্যের অংশ। পূজার সময়ে অতিথি আপ্যায়ন একটি আনন্দময় এবং আন্তরিক কাজ। যা সঠিক পরিকল্পনা এবং যত্নের মাধ্যমে আরও উপভোগ্য করে তোলা যায়। অতিথিদের স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে খাবারের আয়োজন, বিনোদন এবং উপহারের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসবের সম্পূর্ণ আনন্দে শামিল করা সম্ভব। পূজার সময় অতিথি আপ্যায়নের কী কী করবেন_
ঘর সাজানো ও পরিষ্কার করা
অতিথি আপ্যায়নের প্রথম ধাপ হলো ঘরকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করা। পূজার সময়ে ঘর পরিষ্কার এবং সুন্দরভাবে সাজানো অতিথিদের একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতা দেবে। পূজার আগেই ঘরের প্রতিটি অংশ, বিশেষ করে অতিথি বসার জায়গা এবং খাবার খাওয়ার স্থান পরিষ্কার করা উচিত। পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ অতিথিদের স্বস্তি দেবে।
পূজার থিমে ঘর সাজান
পূজার জন্য বিশেষ থিম বা সাজসজ্জা করতে পারেন। ফুল, প্রদীপ, রঙ্গোলি, আলো, এবং ধূপ ব্যবহার করে ঘরের পরিবেশকে পূজার জন্য উপযুক্ত করে তুলুন। এতে অতিথিরা পূজার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
আলো এবং মোমবাতি
সন্ধ্যাবেলায় বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা বিশেষ আকর্ষণ যোগ করে। মোমবাতি, প্রদীপ এবং লাইটিংয়ের মাধ্যমে উৎসবের পরিবেশ তৈরি করা যায়। অতিথিদের জন্য ঘরকে নতুনভাবে সাজাতে পর্যাপ্ত আলো ও মোমবাতি জ্বালিয়ে নিন।
অতিথিদের স্বাগত জানানো
অতিথি আপ্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অতিথিদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো। অতিথিদের প্রতি যত্নশীল আচরণ তাদেরকে উৎসবের আনন্দে আরও বেশি যুক্ত করে। অতিথিদের ঘরে প্রবেশের সময় হাসিমুখে স্বাগত জানান।
তুলসী জল বা আতর, ফুলের মালা
পুরোনো ঐতিহ্য অনুযায়ী অতিথিদের তুলসী জল বা আতর দিয়ে অভ্যর্থনা করতে পারেন। এটি অতিথিদের ভালো লাগবে এবং তাদের প্রতি আপনার সম্মানের প্রতিফলন হবে। আবার অতিথিদের ফুলের মালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন। এটি উৎসবের আবহ তৈরি করে এবং অতিথিদের বিশেষ অনুভূতি দেয়।
খাবারের আয়োজন
পূজার সময় অতিথি আপ্যায়নে বিশেষভাবে খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পূজার খাবারের মেনুতে বিশেষ পদের আয়োজন করলে অতিথিরা সন্তুষ্ট হবেন এবং উৎসবের মজা উপভোগ করবেন। পূজার দিনে প্রথাগত খাবার যেমন খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুন ভাজা, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি পরিবেশন করা যেতে পারে। এগুলো পূজার ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং অনেকেই এই ধরনের খাবারের স্বাদ নিতে পছন্দ করেন।
পূজার অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে মিষ্টি অন্যতম প্রধান উপাদান। রসগোল্লা, সন্দেশ, লাড্ডু, মালপোয়া ইত্যাদি মিষ্টি পরিবেশন করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন মৌসুমি ফল যেমন আম, কলা, পেয়ারা ইত্যাদি পরিবেশন করলে অতিথিরা স্বাস্থ্যকর খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।
অতিথিদের স্বাগত জানাতে চা, কফি বা নরম পানীয় পরিবেশন করতে পারেন। গরম দিনে ঠান্ডা পানীয় যেমন সরবত বা ফলের রস ভালো বিকল্প হতে পারে। যদি আপনাদের পূজার মেনুতে বিশেষ কোনো পদ থাকে, যেমন নিরামিষ বা আমিষ বিরিয়ানি, কষা মাংস, ফিশ ফ্রাই, তা অতিথিদের কাছে অবশ্যই উপভোগ্য হবে।
অতিথি বিনোদন
অতিথিরা শুধুমাত্র খাবার নয়, বিনোদনও উপভোগ করেন। পূজার সময় ঘরে ছোটখাটো বিনোদনের ব্যবস্থা করলে অতিথিরা আনন্দ পাবেন। পূজার সময় আরতী বা ধর্মীয় সঙ্গীত বাজানো যেতে পারে। চাইলে অতিথিদের সঙ্গে মিলে আরতীতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। যদি পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একত্রিত হন, তবে পূজার পর একটি ছোট গানের আসর বা গল্পের আয়োজন করতে পারেন। এতে সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন।
পূজার উৎসবের একাধিক দিন ধরে যদি অতিথিরা আসেন, তাহলে প্রতিদিন ভিন্ন ধরনের বিনোদন বা খাবারের আয়োজন করে বৈচিত্র্যময় করে তুলুন।
উপহার দেওয়া
পূজার সময়ে অতিথিদের ছোটখাটো উপহার দিতে পারেন, যা তাদের মনে উৎসবের আনন্দ আরও বাড়িয়ে তুলবে। অতিথিদের হাতে ছোট প্যাকেট মিষ্টি উপহার দিতে পারেন। এটি প্রচলিত এবং অতিথিদের আনন্দ দেয়। পূজার স্মারক হিসেবে ধর্মীয় কোনো সামগ্রী যেমন মূর্তি, ধূপ, বা প্রদীপ উপহার দেওয়া যেতে পারে।