স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা কিন্তু থেমে নেই। বাড়িতে নিয়মিত পড়াশোনা চলছেই। বাচ্চারা পরীক্ষার প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রাখে। কিন্তু সারাবছর পড়াশোনা করেও অনেকে পরীক্ষার আগে হিমশিম খেয়ে যায়। কারণ কোনোভাবেই পড়া মনে থাকে না। সারাবছর যে পড়া মুখস্থ করা হলো, পরীক্ষা এলেই যেন সব গুলিয়ে যায়। একপর্যায়ে হতাশায় ভেঙে পড়ে অনেক বাচ্চা। এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের উপায় কী। মুখস্থ করা পড়া বারবার ভুলে গেলে তো পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ হবে। তাহলে উপায় কী? উপায় হলো, পড়া মনে রাখার কৌশল জানতে হবে। যে কৌশল অবলম্বন করে মুখস্থ করা পড়া কখনোই ভুলে যাবে না শিক্ষার্থীরা।
আত্মবিশ্বাস
যেকোনো কাজে সফলতার জন্য আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন। মনে বিশ্বাস থাকতে হবে, “আমি পারব”। তবেই কঠিন কাজও সহজ মনে হবে। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠবে। পড়াও মনে থাকবে।
আগ্রহী হওয়া
কোনো বিষয়ে শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। আগ্রহ না থাকলে পড়া আনন্দের সঙ্গে হয় না। এতে সহজেই ভুলে যায়। নতুন কিছু শেখার আর জানার আগ্রহ থাকলে সেই বিষয় দীর্ঘদিন স্মৃতিতে থেকে যায়।
পড়ার সঙ্গে লেখার অভ্যাস
যে বিষয়টি পড়া হচ্ছে, সেটি সঙ্গে সঙ্গে লিখে নিলে তা দীর্ঘসময় মনে থাকে। এটি অনেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর একটি পদ্ধতি। যেকোনো পড়া যতবার লেখা হবে, তা তত বেশি মনে থাকবে।
উচ্চস্বরে পড়া
অনেক শিক্ষার্থী মনে মনে পড়া মুখস্থ করে। এটা সাময়িকভাবে মাথায় থেকে যায়। কিন্তু মুখস্থ করার সময় উচ্চস্বরে পড়লে তা সহজেই শোনা হয় এবং মাথায় গেঁথে যায়। শব্দ কানে প্রতিফলিত হয়ে সহজে মনে রাখতে পারে।
কনসেপ্ট ট্রি
শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন একটি পদ্ধতি হচ্ছে ‘কনসেপ্ট ট্রি’। কোনো অধ্যায় শেখার আগে তা ৭টি মূল অংশে ভাগ করতে হবে। প্রতিটি অংশের সারাংশ লিখে খাতায় গাছের মতো আঁকতে হবে। যেন পুরো বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীর ধারণা হয়। যা তাকে পুরো বিষয়টি মনে রাখতে সাহায্য করবে।
কি ওয়ার্ড
পড়াশোনায় অনেক বিষয়ই শিক্ষার্থীর কাছে কঠিন মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে ছন্দের মাধ্যমে কঠিন বিষয় মনে রাখা যায়। রংধনুর সাতটি রঙের নাম মনে রাখতে ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি ব্যবহার হয়। তেমনই কোনো কঠিন বিষয়কে কি ওয়ার্ড দিয়ে মনে রাখা যেতে পারে।
কালরেখা
ইতিহাস মনে রাখা সহজ নয়। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ও তাদের অবদানের কথা উল্লেখ থাকে। যা কোনোভাবেই ভুল করা যায় না। তাই এমন বিষয়গুলো ভালোভাবে মনে রাখতে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ও অবদান সাল অনুযায়ী লিখে পড়া মুখস্থ করলে মনে রাখা সহজ হবে।
নতুন-পুরনো তথ্য
নতুন কোনো বিষয় শেখার আগে এর সংশ্লিষ্ট পুরোনো কোনো তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া যেতে পারে। এতে পড়া সহজেই মনে থাকবে। এটি মস্তিষ্ককে তথ্য গ্রহণে সাহায্য করে।
অর্থ জানা
শিক্ষার্থী যে বিষয়ে পড়ছে তার অর্থ জানতে হবে। অর্থ বুঝে পড়লে বিষয়টি সহজে মনে থাকে। কারণ বিষয়টি কী বলা হচ্ছে, তা আয়ত্তে চলে আসে। এতে ভুলে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
বুঝে পড়া
মুখস্থবিদ্যা ক্ষনিকের জন্য স্থায়ী হয়। মুখস্থ করার পরিবর্তে, বিষয়টি বুঝে পড়া জরুরি। এতে পড়া দীর্ঘদিন মনে থাকে। শুধুমাত্র মুখস্থ করলে তা থেকে কিছুই শেখা যায় না। আর বুঝে পড়লে সে বিষয়ে নিজের ধারণা থেকেও অনেক কিছু যুক্ত করা যায় এবং সে বিষয়টি দীর্ঘসময়ের জন্য আয়ত্ত করা হয়।
নিজের কৌশল
পড়াশোনা সহজ করার টেকনিকটাও নিজেকে বেছে নিতে হবে। যেকোনো বিষয়ে নিজেই নোট তৈরি করা এবং সে বিষয়ে বিস্তারিত জানার আগ্রহ থাকলে পড়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ক্লাসের নোট এবং পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন তৈরি করতে পারে এবং সেগুলোর উত্তর বের করে নিজেই নোট তৈরি করতে পারে। এতে পড়ার গভীরে যাওয়া যায়।