২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়। এরপরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বাঙালিরা। ডিসেম্বরে বিজয় পেয়ে পূর্ণ স্বাধৗনতা পায় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা বাঙালি জাতির বড় অর্জন ও গৌরব। হাজারো নিমর্ম ঘটনার মধ্য দিয়ে এই অর্জন পায় বাঙালি। যা সময় গড়িয়ে এখন স্মৃতির পাতায় লিপিবদ্ধ।
১৯৭১ সালেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এর পেছনে রয়েছে হাজারো স্মৃতি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আসছে পৃথিবীতে। স্বাধীনতার সেই স্মৃতি উঠে এসেছে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে। লাখো শহিদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা বাঙালির গৌরব। এই গৌরবময় ইতিহাস আর ঘটনাগুলো সঠিকভাবে জানাতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে।
আজকের শিশুই ভবিষ্যত প্রজন্ম। স্বাধীনতার পরে জন্ম নেওয়া আমরা যেমন স্বাধীনতার ইতিহাসকে জেনেছি। তেমনি আজকের শিশুদের মাঝেও সেই গৌরবময় ইতিহাস তুলে দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব। পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা পায় শিশুরা। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। সবজায়গাতেই স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে।
কৗভাবে পেল এই স্বাধীনতা? লাখো শহিদ ও বীরঙ্গনাদের ত্যাগের ইতিহাস কেমন ছিল? কীভাবে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা অর্জনে? সবকিছুই তুলে জানতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের।
বইপুস্তকে স্বাধীনতার ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বইয়ের গৎবাঁধা লেখায় আটকে না রেখে গল্পে গল্পে বাচ্চাদের জানাতে হবে স্বাধীনতার পূর্ণ ইতিহাস। শৈশব থেকেই স্বাধীনতা বিষয়ক বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। বাবা মায়েরা নিজেরাই স্বাধীনতার বই পড়ে শোনাতে পারেন। একসময় নিজের আগ্রহেই সেই বই পড়বে বাচ্চারা।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা নানা বই রয়েছে। সঠিকভাবে স্বাধীনতা ইতিহাসকে বর্ণনা করেছে এমন বই তুলে দিতে হবে বাচ্চাদের হাতে।
স্বাধীনতার স্মৃতি দিয়ে সাজানো রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন জিনিসের দেখা মিলবে। ছুটির দিনে বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরে আসুন সেখানে। মুক্তিযুদ্ধের ব্যবহৃত সবকিছু তাকে ঘুরে দেখান। বাচ্চারা তাদের কল্পনায় মুক্তিযুদ্ধকে উপলব্ধি করতে পারবে।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নাটক, গল্প, কবিতা রয়েছে। এসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন শিশুকে। এছাড়াও স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধ ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এসব সিনেমাও বাচ্চাদের নিয়ে উপভোগ করতে পারেন।
এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসে স্কুল, কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে। সেসব অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের অংশগ্রহণ করতে দিন। তাকে উৎসাহ দিন। গল্প, কবিতা আবৃতি করে সেই অনুষ্ঠানে বাচ্চারা অংশ নিতে পারে। আপনিও তাকে সহযোগিতা করুন।
লাল সবুজ পোশাকে সাজিয়ে দিন শিশুকে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকার রঙ লাল সবুজের পোশাক পাওয়া যায় সবজায়গায়। ছোট বড় সবার জন্যই প্রতিবছর নানা ডিজাইনের পোশাকের আয়োজন করা। যেখানে রাখা হয় স্বাধীনতার মোটিফ। বাচ্চাকে সেই পোশাক কিনে দিন। এতে দিবসের গুরুত্ব তার কাছে আরও বেড়ে যাবে।
শৈশব থেকেই দেশ এবং স্বাধীনতার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে পরিবারের ভূমিকা অতুলনীয়। পরিবারের বয়োজোষ্ঠ্যরা রয়েছেন, যারা স্বচক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছেন তাদের কাছে বসে সেই সময়ের কথা শুনুন। বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে বসে যুদ্ধের সময়কার গল্প করুন। শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম জেগে উঠবে। তারাও দেশকে ভালোবাসবে।
ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যই স্বাধীন বাংলাদেশকে উপহার দিয়ে গেছেন লাখো শহিদেরা। তাদের এই ত্যাগকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। সেই উপলব্ধি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই। রক্তক্ষয়ী স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার সোনালি ইতিহাস জানলে দেশের জন্য কল্যানকর কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারবে ভবিষ্যত প্রজন্ম।