পৃথিবীর বুকে কত খাবারেরই না স্বাদ পাওয়া যায়। একেক দেশে একেক রকমের খাবার। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে মহাকাশ ভ্রমণে গেলেই খাবার খেতে হয় ভেবে চিন্তে। এমনকি লবণ, চিনি ছাড়াই খাবার খেতে হয় মহাকাশচারীদের।
মহাকাশচারীদের জীবন নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। মহাকাশে কীভাবে থাকেন, কীভাবে খাবার খাচ্ছেন-এমন অনেক কিছুই জানার আগ্রহ থাকে সাধারণ মানুষের।
মহাকাশচারীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই মহাকাশ ভ্রমণে যান। পৃথিবী থেকে মহাকাশে যাওয়ার আগেই তারা প্রস্তুতি নেন। যেখানে রান্না করা খাবার, কিংবা প্যাকেটজাত খাবারও সঙ্গে নিতে হয় মহাকাশচারীদের। সাধারণত মহাকাশ স্টেশনে রান্না করার ব্যবস্থা থাকে না। তাই মহাকাশে থাকাকালীন কোন খাবার খাওয়া হবে তা পৃথিবী থেকেই নিয়ে যাওয়া হয়।
মহাকাশচারীদের খাবার নির্বাচন এবং খাবারের প্যাকেজিং দুটোর উপরেই কঠোর নজর থাকে। মহাকাশ মিশনে নিরাপদ, সুস্বাদু খাবার নিতে হয়। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে বলে এর যেন পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হয়। তাই প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটির বিষয়টি নজরে রেখেই নাসার স্পেস খাবার তৈরি হয়।
মহাকাশ মিশনে অনেক খাবার খাওয়া থেকেই বঞ্চিত হন মহাকাশচারীরা। সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অনেক খাবার খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বলা যায়, এসব খাবার মহাকাশ মিশনে নেওয়া নিষিদ্ধ। যেমন_ রুটি, বিস্কুট, লবণ, চিনি মহাকাশে নিয়ে যাওয়া যায় না। সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকায় রুটি, লবণ, চিনি কিংবা বিস্কুটের গুড়ো মহাকাশ স্টেশনের বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকে। যা মহাকাশচারীদের চোখে, নাকে ঢুকে গিয়ে ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও বিস্কুট বা কুকিজ শুকনো খাবার চিবিয়ে খাওয়ার সময় মহাকাশচারীদের গলায় আটকে যেতে পারে। যা থেকে মহাকাশচারীরা অসুস্থ হতে পারেন। তাই মহাকাশে চিনি, লবণ ছাড়া খাবারই খেতে হয় মহাকাশচারীদের।
এছাড়াও মহাকাশ মিশনে নেওয়া যাবে না পিজ্জা, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক এবং তাজা দুধও। এর পরিবর্তে ডিহাইড্রেটেড দুধ মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। তা মহাকাশচারীদের শক্তির সঞ্চার করে। জানা যায়, ১৯৬০ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ মিশনে প্রধান খাবার হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডিহাইড্রেটেড দুধ।
মহাকাশচারীদের জন্য অ্যালকোহলও নিষিদ্ধ। ১৯৭২ সালে স্কাইল্যাব ৪ মিশনে অ্যালকোহল নিয়ে যাওয়া হয়। যা পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের সমালোচনার মুখে পড়ে। এই ঘটনায় নাসাকে ক্ষুব্ধ হয়ে চিঠিও পাঠায় সাধারণ মানুষ। এরপরই অ্যালকোহল নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
বিজ্ঞানী এবং মহাকাশচারী এডওয়ার্ড জি. গিবসন জানান, বিশুদ্ধতার প্রতিনিধিত্ব করেন মহাকাশচারীরা। তাই অ্যালকোহল থেকে দূরে রাখা হয়।
তাহলে মহাকাশ মিশনে কী খাওয়া হয়? প্রতিটি মহাকাশ মিশনের খাবারের তালিকা ভিন্ন হয়। মহাকাশ মিশনে যাওয়া আগেই এই তালিকা তৈরি হয়। যেখানে প্রায় একশোর বেশি পদ থাকে। এসব খাবার যেন সহজেই নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। সাধারণত মহাকাশচারীদের জন্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবারই তালিকায় রাখা হয়।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের খাবারের তালিকায় থাকে পুষ্টিকর শাকসবজি, ফল। আরও থাকে মিষ্টি জাতীয় খাবার। এরমধ্যে পুডিং রাখা হয়। অধিকাংশ খাবারই ডিহাইড্রেটেড এবং ভ্যাকুয়াম-সিলড পাউচে প্যাকেট করা হয়। স্যান্ডউইচ বা রিহাইড্রেটেবল স্যুপ রাখা হয়। শুকনো করা মাংসের স্টু, চিকেন কারি বা পাস্তা খাওয়ার সুযোগ পান মহাকাশচারীরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট