বন্যা পরবর্তী সময়ের পুনর্বাসনে ত্রানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যাকবলিত প্রত্যেকটি এলাকায় ত্রানের সঠিক বন্টন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বন্যার্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে এবং ছোট, বৃদ্ধদের সুস্থভাবে বেচে থাকতে ত্রানের ব্যবস্থা করতে হয়। বিশেষ করে খাবারের ব্যবস্থা করা সবচেয়ে জরুরি। এক্ষেত্রে উপযোগিতা ও পুষ্টিমানের দিকে খেয়াল রেখে ত্রানের জন্য খাবার বাছাই করতে হবে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রান সরবরাহ করা হচ্ছে। রেসকিউ টিম খাদ্য ও বস্ত্র নিয়ে প্রতিনিয়ত বন্যাকবলিত এলাকায় ছুটে যাচ্ছে। সেই খাবার ও বস্ত্র পৌছে দিচ্ছে বন্যার্তদের কাছে। তবে বিশেষ এই পরিস্থিতিতে কোন খাবার উপযোগী তা খেয়াল রাখতে হবে। ত্রাণ হিসেবে যেসব খাদ্য উপকরণ কেনা হচ্ছে তা কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত এবং এর পুষ্টিগুণ কেমন তাও খেয়াল রাখা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ত্রানের উপযুক্ত খাবার কিনতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে চলুন জেনে আসি এই আয়োজনে।
· শুকনা জাতীয় খাবার যেগুলো বেশিদিন সংরক্ষণে রেখে খাওয়া যাবে, সেগুলো কিনতে হবে। মুড়ি, চিড়া, গুড় বা চিনি, পাউরুটি, কেক, টোস্ট বিস্কুটসহ অন্যান্য বিস্কুট,পাউডার ড্রিংকস, নিমকি, ক্র্যাকার ইত্যাদি শুকনো খাবার কেনা যেতে পারে।
· বড় প্যাকেট না কিনে ছোট ছোট অনেকগুলো প্যাকেট কিনতে পারেন। এতে প্যাকেজিংয়ে জায়গা কম লাগবে।
· অন্তত তিনদিন রেখে খাওয়া যাবে এমন খাবার কিনবেন। কেনার আগে অবশ্যই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিতে হবে। খেজুর, বাদাম, ছাতু, গ্লুকোজ পাউডার ইত্যাদি খাবার খুব পুষ্টিকর ও শক্তি দেয়। এগুলোও ত্রানে যুক্ত করুন। লবণ ও চিনি দিতে ভুলবেন না।
· প্রোটিনের কথা মাথায় রেখে ছোলা ভাজা, ডাল ভাজা দেওয়া যেতে পারে। চীনা বাদামে ভালো ফ্যাট থাকে। এছাড়া ছাতুতেও প্রোটিন, খাদ্য আঁশ থাকে। তাই এগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে ত্রাণের খাবার হিসেবে।
· রান্না করার মতো পরিস্থিতি থাকলে চালের সঙ্গে অবশ্যই মিশ্র ডাল দেওয়া যেতে পারে। মিশ্রিত ডালের খিচুড়ি দিলেও ভালো হয়। এতে ডালের উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মান বেড়ে যায়। গুঁড়া দুধ দিতে হবে। এটি শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারবে।
· খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। সব বয়সের মানুষ সব ধরণের খাবার খেতে পারে না। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য নরম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যা চিবিয়ে খেতে হয় না। এক্ষেত্রে নরম খিচুড়ি রান্না করার জন্য পোলাওয়ের চাল পাঠানো যায়। বাচ্চাদের জন্য গুঁড়া দুধ, ছাতু, হরলিক্স, গ্লুকোজ, সেরেলাক ইত্যাদি পাঠাতে হবে।
· সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সব ধরণের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত নয়। এই বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। খাগড়াছড়িতে ত্রানের খাবার পাঠানোর ব্যাপারে স্থানীয়দের খাদ্যাভাস মাথায় রাখা জরুরী।
· বন্যার্তদের খাবারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা জরুরি। বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি দিতে হবে। নয়তো পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য বিভিন্ন ট্যাবলেট, ক্লোরিন, ফিটকিরি সরবরাহ করতে হবে। এছাড়াও সরাসরি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেও পান করা যাবে। তবে প্যাকেটজাত স্যালাইন সরবরাহ করতে ভুলে গেলে চলবে না।