ভিটামিন সির সবচেয়ে ভালো উৎস হলো লেবু। আমরা সাধারণত লেবুর রস খাওয়ার পর খোসা ফেলে দিই। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, লেবুর রসে যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি এর খোসাতেও রয়েছে চমৎকার পুষ্টিগুণ। শুধু পুষ্টিগুণই নয় এটি ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে জীবানুমুক্ত করাসহ আরও অনেক কাজে দারুণ উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী-
লেবুর খোসার উপকারিতা
লেবুর খোসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এতে প্রায় ৫-১০ গুণ বেশি পুষ্টি থাকে। প্রায় ১০০ গ্রাম লেবুর খোসাতে ১৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ১২৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১০.৬ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।
হাড় মজবুত করে
ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। লেবুর খোসাতে থাকা এই পুষ্টিগুলো প্রদাহজনিত পলি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগও প্রতিরোধ করে।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ
ভিটামিন সির অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল ক্ষমতা নাড়িভুঁড়ির ভেতরে থাকা কৃমি এবং পরজীবী জীবাণু মেরে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
একইভাবে লেবুর রসের মতো লেবুর খোসাও সাইট্রাস বায়োফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ। যা শরীরের ভেতরকে ক্ষারীয় করে তোলে। লেবুর খোসা ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে। আর অ্যাসিডিক পরিবেশে ক্যান্সারের কোষগুলো বাড়তে থাকে। এছাড়া দেহের ভেতরে ক্যান্সার কোষগুলোর বেড়ে ওঠার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
যেভাবে খাবেন
খোসা জমিয়ে শুকিয়ে রাখতে পারেন। যাতে এগুলো ভালোভাবে গুড়া করে নেওয়া যায়। এটি করার সহজ উপায় হলো ওভেনে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ভেজে নিয়ে পরে গুঁড়া করে নেওয়া। এই গুঁড়া বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাবার, পানীয়, অর্গানিক চা এবং স্যুপে মিশিয়ে খেতে পারেন।
ত্বকের যত্নে লেবু খোসার ব্যবহার
এক মুঠো লেবুর খোসার পেস্ট করে নিন। তারপর ১-২ কাপ চিনি দিয়ে পেস্টটি ভালো করে মেশান। পরে আপনার ত্বকের ধরন বুঝে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকের জন্য তৈরি পেস্টে তৈলাক্ত ত্বকের চেয়ে বেশি তেল দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করতে হবে।
এটি তৈরি করার পর, ভেজা ত্বকে আলতোভাবে ঘষে ২ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ স্ক্রাব ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখাবে এবং ত্বকের মৃত কোষগুলোকে জীবিত করে তুলবে। সপ্তাহে ১ বার আপনি লেবুর খোসার স্ক্রাব লাগাতে পারেন।
ফেস মাস্ক হিসেবে
এক চিমটি লেবুর খোসার গুঁড়ার সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এবার এ মিশ্রণটিতে ঠান্ডা দুধ দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকের মৃত কোষগুলোকে জীবিত করে তুলতে এ পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে আপনার মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এ ফেস প্যাকটি আপনার ত্বককে সতেজ করে তুলবে।
পা ফাটার চিকিৎসায়
এক কাপ ঝাঁঝরা করা খোসা গুঁড়া করে তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার তৈরি করা এ পেষ্টটি আপনার ফাটা পায়ে লাগিয়ে নিন। এরপর পায়ে মোজা পড়ে পেস্টটি ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিন।
ছত্রাকের সংক্রমণ রোধে
তিন কাপ লেবুর খোসায় ৬-৭ কাপ পানি দিয়ে আধা ঘণ্টা সেদ্ধ করে ছেঁকে নিন। এ তরলটিতে দুধ বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার ৩০ মিনিটের জন্য সেটিতে পা ডুবিয়ে রাখুন। এভাবে নিয়ম করে লেবুর খোসার পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে সংক্রমণ দূর হয়।
নখ ভালো রাখতে
বিবর্ণ হয়ে যাওয়া নখ ভালো রাখতে একমুঠো লেবুর খোসা পেস্ট করে নিন। এবার পেস্টটি নখে লাগিয়ে ৫-৭ মিনিটের জন্য রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার করে এটি করলে নখের স্বাভাবিক রঙ ফিরে আসবে।
দুর্গন্ধ দূর করতে
ফ্রিজ, বদ্ধ ড্রয়ার, ক্যান ইত্যাদির ভেতরে মাঝে মাঝে দুর্গন্ধ হয়ে যায়। এর জন্য একবাটি পানিতে কয়েকটি লেবুর খোসা দিয়ে কিছু সময়ের জন্য মাইক্রোওয়েভের ভেতরে রাখুন। এটি ভেতরের দুর্গন্ধকে সতেজ গন্ধে পরিণত করবে। কাটারবোর্ড জীবাণুমুক্ত করার জন্য লেবুর খোসার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ঘষুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
তাই, লেবুর খোসা ফেলে না দিয়ে এসব কাজে ব্যবহার করুন।