শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় শিশুর আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিতকরণে। কারণ ঠাণ্ডা আবহাওয়া শিশুর আরাম এবং স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুকে আরামদায়ক ও সুরক্ষিত ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে শিশুকে শীতে আরামে ঘুমাতে সাহায্য করা যায়।
ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
শিশুর জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি। ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি ঠাণ্ডা বা গরম হওয়া উচিত নয়। ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস একটি আদর্শ তাপমাত্রা যা শিশুর আরামের জন্য উপযুক্ত। যদি ঘর খুব ঠাণ্ডা হয়, তাহলে হিটার ব্যবহার করুন। তবে হিটার শিশুর কাছাকাছি রাখবেন না।
সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন
শীতের রাতে শিশুকে আরামদায়ক এবং উষ্ণ পোশাক পরাতে হবে। নরম, তুলতুলে এবং আরামদায়ক কাপড় বেছে নিন। কাপড়টি এমন হতে হবে যা শিশুর ত্বকে সুরক্ষিত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
জামার ধরণ
শিশুর ফুল হাতা জামা এবং প্যান্ট বেছে নিন। অতিরিক্ত কাপড় পরানোর চেয়ে লেয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করুন। যাতে সহজে অতিরিক্ত একটি লেয়ার কমানো বা যোগ করা যায়।
কম্বল ও বেডিং এর সঠিক ব্যবহার
শিশুর বিছানা আরামদায়ক এবং নিরাপদ হওয়া উচিত। নরম ও উষ্ণ কম্বল ব্যবহার করুন। তবে শিশুকে বেশি ভারী কম্বলে ঢেকে দেবেন না, কারণ এটি তাদের নিশ্বাস নিতে বাধা দিতে পারে। বিশেষ স্লিপিং ব্যাগ বা স্লিপিং স্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এটি শিশুকে উষ্ণ রাখবে।
শিশুর ত্বকের যত্ন নিন
শীতকালে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা অস্বস্তি সৃষ্টি করে। শিশুর ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার জন্য হালকা বেবি লোশন বা বেবি অয়েল ব্যবহার করুন। ঘুমানোর আগে শিশুর মুখ, হাত ও পায়ের ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করুন, যা তাদের আরামে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
সঠিক ঘুমের ভঙ্গি বজায় রাখুন
বিশেষ করে নবজাতক বা ছোট শিশুর ক্ষেত্রে সঠিক ঘুমের ভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিৎ হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে নিরাপদ ঘুমের ভঙ্গি। যা শিশুকে শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করে। পাশে ঘুমানোর ভঙ্গি বা পেটে ঘুমানোর ভঙ্গি এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সঠিক পরিবেশ তৈরি করুন
শিশু ঘুমানোর সময় চারপাশ শান্ত ও নিরিবিলি রাখা জরুরি। রাতে ঘুমানোর সময় আলো কমিয়ে রাখুন। কোনো প্রকার শব্দ দূষণ এড়িয়ে চলুন।
শিশুকে সঙ্গ দিতে মায়ের কাছাকাছি রাখা যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত নড়াচড়া এড়িয়ে চলুন।
ঘুমানোর সময় মাথা ঢেকে দেবেন না
অনেক সময় শিশুর মাথা ঢেকে রাখার জন্য টুপি বা কম্বল ব্যবহার করা হয়। তবে এটি শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। মাথা ঢেকে রাখার পরিবর্তে পুরো শরীর ঢেকে রাখার দিকে মনোযোগ দিন।
ফ্ল্যানেল কাপড় ব্যবহার করুন
শিশুর আরামদায়ক ঘুমের জন্য ফ্ল্যানেল কাপড় ব্যবহার করুন। এটি নরম এবং উষ্ণ, যা শিশুর আরাম নিশ্চিত করবে।
শিশুর নাক পরিষ্কার রাখুন
শীতে শিশুদের নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ঘুমানোর আগে নাক পরিষ্কার করে দিন যাতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে শ্বাস নিতে পারে। নাক পরিষ্কার রাখতে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাইড্রেশন বজায় রাখুন
শীতকালে শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। ঘুমানোর আগে শিশুকে বুকের দুধ বা ফর্মুলা খাওয়ানো নিশ্চিত করুন। এটি শুধু পুষ্টি দেবে না, বরং তাদের উষ্ণতাও বজায় রাখবে।
সঠিক ঘুমের রুটিন তৈরি করুন
শিশুর জন্য একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন যাতে তারা শীতের রাতে আরামদায়ক ঘুম উপভোগ করতে পারে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন
শীতে ঠাণ্ডা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। শিশুকে সর্দি-কাশি থেকে সুরক্ষিত রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। শিশুর ঘরে কার্পেট বা ধুলোময় বস্তু এড়িয়ে চলুন এবং ঘরের বাতাস শুদ্ধ রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।