বর্তমান সময়ে বাইরে খাওয়া বেশ ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে। কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াও এখন বাইরে খাওয়া যেন নিয়মিত বিষয়। সব বয়সী মানুষই বাইরে খেতে পছন্দ করে। প্রিয় রেস্তোরায় গিয়ে প্রতি সপ্তাহে একদিন খাওয়ার অভ্যাসও রয়েছে অনেকের। কারণ বাঙালি তো ভোজনপ্রিয়। তাই বাড়ির খাবারের পাশাপাশি বাইরে গিয়ে খাওয়াও বেশ উপভোগ করে।
যারা বাইরে গিয়ে খেতে পছন্দ করেন আজকের দিনটি তাদের জন্যই। কারণ ৩১ আগস্ট, বাইরে খাওয়ার দিন। ২০০৬ সাল থেকে এটি পালিত হচ্ছে। আনন্দ ও প্রীতিপূর্ণ এই দিবস পালন করতে অনেকেই আজ বাইরের খাবার উপভোগ করবেন।
দেশীয় প্রেক্ষাপটে একে ‘চড়ুইভাতি দিবস’ও বলা যায়। পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে চড়ুইভাতি উৎসব আয়োজনের রীতি বহুআগ থেকেই রয়েছে। অনেকেরই ছোটবেলার স্মৃতিতে জড়িয়ে রয়েছে চড়ুইভাতি। যেখানে সবাই মিলে রান্না করে বাড়ির ছাদে কিংবা খোলা উঠানে বসে খাওয়া হতো। বর্তমান সময়ে এমন দৃশ্য প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বাইরে খাওয়ার সুযোগ কিন্তু বিস্তৃত হয়েছে। এখন সুযোগ মিললেই ছুটে যায় বিভিন্ন রেস্তোরায়। আর বিভিন্ন স্বাদের খাবার উপভোগ করে।
আগের দিনগুলোর মতো গ্রামাঞ্চলে এখনো খোলা মাঠ, নদীর তীর কিংবা গাছের নিচে শিশু-কিশোররা প্রীতিভোজনোৎসবের আয়োজন করে। অঞ্চলভেদে এর নাম টুলাপানি, ভুলকাভাত। তবে শহরের মানুষেরাও সময়-সুযোগ পেলেই সদলবল বেরিয়ে পড়ে নিবিড় কোনো বনাঞ্চল বা পাহাড়ের দিকে। সেখানে রান্নাবান্না আর খাবারের আয়োজন করে মুহূর্তকে উপভোগ করে।
যদিও ‘চড়ুইভাতি’কে অনেকে পিকনিক বা বনভোজন বলেও আখ্যায়িত করে। তবে দুয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পাড়ার ছেলে মেয়রা মিলে বাড়ির আশপাশেই চড়ুইভাতির আয়োজন করে। কেউ বাড়ি থেকে চাল আনে, কেউ ডাল নিয়ে আসে। কেউ ডিম, মুরগি বা অন্য কোনো উপকরণ নিয়ে এসে একসঙ্গে রান্না করে এবং খাবার খায়। আর বনভোজন হচ্চে দূরে কোথাও যাবে এবং সবাই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে অংশগ্রহণ করবে। তবে দুই ক্ষেত্রেই বাইরে গিয়ে খাওয়া হয়। তাই এই দিনে দুটোকেই উপভোগ করা যায়।
ফরাসি বিপ্লবপরবর্তী (১৭৮৯–১৭৯৯) সময়ে রাজকীয় পার্কগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। ওই সময় বিভিন্ন সামাজিক সম্মিলনের জন্য সেখানে জড়ো হয় সাধারণ মানুষ। তারা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতেন এবং সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেতেন। এই আনন্দপূর্ণ ভোজনোৎসবকে বলা হতো ‘আল-ফ্রেসকো ডাইনিং’।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রেও গড়ে উঠতে থাকে প্লেজার গার্ডেন বা আনন্দ উদ্যান। জার্মানিতে গড়ে ওঠে ‘বিয়ার গার্ডেন’। এসব অবকাশযাপনের স্থানে সাধারণ মানুষ ঘুরে বেড়াত, খেলাধুলা করত এবং খাওয়া দাওয়ার আয়োজনও করতেন।
আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে মানুষ দূরে গিয়ে খাওয়ার আয়োজন শুরু করে। বিশেষ উপলক্ষ, বার্ষিক পুনর্মিলন কিংবা কোনো উপলক্ষ ছাড়াই বাইরে খেতে যায়। রেস্তোরাঁ, ছাদ-রেস্তোরাঁ, বুফে, ধাবা, বারবিকিউয়ের মতো নানা রকম খাবারের আয়োজনে এখন সবাই খাবার উপভোগ করে। যা ব্যস্তজীবনের বাইরে সত্যিই স্বস্তি ফিরিয়ে আনে।
সূত্র: ন্যাশনাল টুডে