বদনজরকে আরবি ভাষায় "আল-আইন" বলা হয়। যা হচ্ছে এক ধরনের কুদৃষ্টির প্রভাব। কোনো ব্যক্তির ঈর্ষা, অতিরিক্ত প্রশংসা বা কু-চিন্তার ফলে অন্য একজনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বদনজর অনেক সময় শারীরিক, মানসিক বা বস্তুগত ক্ষতির কারণ হতে পারে। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে: “নজর লাগা সত্য।”(সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৭৪০; সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২১৮৭)। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বদনজর একটি বাস্তব ও প্রভাবশালী বিষয়।
বদনজর সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে, সৌন্দর্য অসুন্দর করতে পারে, ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে পারে এবং সুখী জীবনকে বিষাদে পরিণত করতে পারে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বদনজর সত্য। এটি এমন একটি প্রভাব যা মানুষকে উঁচু স্থান থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ: ২৪৭৩)।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, কোনো বস্তু যদি তাকদিরকে অতিক্রম করতে পারতো, তবে তা হতো বদনজর। (তিরিমিযী ২০৫৯, আহমাদ ৬/৪৩৮)
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু হবে বদ নজর লাগার ফলে। (আত তারিখ, বুখারি)।
বদনজর লাগার লক্ষণ
কারো বদনজর লাগলে সাধারণ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে। যেমন- হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতা বা দুর্বলতা, অতিরিক্ত মাথাব্যথা বা বমি, ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন, মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ, ব্যাখ্যাতীত সমস্যা বা বিপদ, ব্যবসায় বা জীবনে হঠাৎ অগ্রগতি থেমে যাওয়া। তবে এসব লক্ষণ যে শুধুই বদনজরের কারণে হয়, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
বদনজর থেকে বাঁচার আমল
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমল রয়েছে।
সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ
এই দুটি সূরা বদনজর, জাদু এবং সকল প্রকার শয়তানি কু-প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী। সূরা ফালাক (সূরা ১১৩) ও সূরা নাস (সূরা ১১৪) প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করা সুন্নত।
আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা: ২৫৫)
এই আয়াত পাঠ করলে বদনজরসহ সব ধরনের অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সকালে ও রাতে পড়া উত্তম।
রসুল (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী দোয়া
হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) শিশু হাসান ও হুসাইন (রা.)-দের উপর এই দোয়া পাঠ করতেন:
"أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ"
অর্থ: “আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর মাধ্যমে শয়তান, বিষধর প্রাণী এবং কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে রক্ষা চাই।”(সহীহ বুখারী) আপনি এই দোয়া নিজ সন্তান বা নিজের ওপরও নিয়মিত পড়তে পারেন।
বিসমিল্লাহ বলা ও প্রশংসার সময় দোয়া করা
যখন আপনি কোনো কিছু ভালো দেখেন বা কাউকে প্রশংসা করেন, তখন ‘মাশাআল্লাহ’,‘বারাকাল্লাহু ফিক’ বা ‘আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে’—এই ধরনের কথা বলুন। এতে বদনজর লাগার আশঙ্কা কমে।
বদনজর একটি সত্য বিষয়, যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এটি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইসলাম দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত, এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করার শিক্ষা দেয়। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় দোয়া পড়া, সূরা ফালাক, সূরা নাস, আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করা এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখাই বদনজরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।