ডিম আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ উৎস। কিন্তু ডিম পুষ্টিকর হলেও, যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তবে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই ডিম সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম জানা এবং তা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিম সংরক্ষণের সঠিক উপায়।
ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন
ডিম কেনার পরই তা ফ্রিজে রাখা উচিত। ঠাণ্ডা পরিবেশ ডিমের সতেজতা বজায় রাখে এবং ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে সালমোনেলা নামক জীবাণু ডিমের ওপর থেকে শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা খাবারজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে। ফ্রিজের ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম তাপমাত্রায় ডিম রাখা সবচেয়ে নিরাপদ।
ডিমের বড় দিকটি ওপরে রাখুন
ডিমের একটি বড় এবং একটি ছোট প্রান্ত থাকে। সংরক্ষণের সময় বড় দিকটি ওপরের দিকে রাখতে হবে। এতে করে ডিমের ভিতরের এয়ার সেল বা বায়ুকোষ উপরের দিকে থাকবে এবং ডিমের কুসুম বা ইয়োক মাঝামাঝি থাকবে, ফলে ডিম দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
মূল প্যাকেটে রাখুন
বাজার থেকে কেনা ডিমের খালি ট্রে বা প্যাকেট ফেলে না দিয়ে সেগুলিতে রেখেই ফ্রিজে রাখা ভালো। কারণ ডিমের খোসা স্বাভাবিকভাবেই ছিদ্রযুক্ত হয় এবং এর মাধ্যমে ফ্রিজের ভেতরের গন্ধ বা জীবাণু ডিমের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। মূল প্যাকেট ডিমকে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করে এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে।
ফ্রিজের ভিতরের অংশে রাখুন
অনেকেই ফ্রিজের দরজার খোপে ডিম রাখেন, কিন্তু সেটি ঠিক নয়। কারণ ফ্রিজের দরজা বারবার খোলা-বন্ধ হওয়ার ফলে সেখানে তাপমাত্রার ওঠানামা হয়, যা ডিমের সতেজতা নষ্ট করতে পারে। তাই ডিম ফ্রিজের মূল শেলফের ঠাণ্ডা ও স্থির জায়গায় রাখা উচিত।
ডিম ধোয়া যাবে না
অনেকে মনে করেন ডিম ফ্রিজে রাখার আগে ভালোভাবে ধুয়ে রাখা উচিত। কিন্তু আসলে ডিমের খোসার ওপর প্রাকৃতিক একটি আবরণ (ব্লুম) থাকে, যা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ডিমকে রক্ষা করে। ডিম ধুলে এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাকবচ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ডিম দ্রুত নষ্ট হতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে ডিম ধোয়া উচিত, সংরক্ষণের আগে নয়।
তারিখ দেখে ব্যবহার করুন
যদি ডিমের প্যাকেটে "বেস্ট বিফোর" বা উৎপাদন তারিখ দেওয়া থাকে, তাহলে সেটি দেখে নেওয়া জরুরি। পুরনো ডিমের চেয়ে সতেজ ডিম খাওয়া সবসময় ভালো। ঘরোয়া উপায়ে পরীক্ষা করতে চাইলে একটি পানির গ্লাসে ডিম ছেড়ে দিন। যদি ডিম পানিতে ডুবে যায়, তবে তা সতেজ; আর যদি ভেসে ওঠে, তবে তা নষ্ট হয়ে গেছে।
রান্না করা ডিমের সংরক্ষণ
সিদ্ধ বা রান্না করা ডিমও ফ্রিজে রাখতে হয়। সাধারণত রান্নার পর ২ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখা উচিত। সিদ্ধ ডিম ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে ভালো থাকে, তবে খোসা না ছাড়িয়ে সংরক্ষণ করাই উত্তম।
ফ্রিজার ব্যবহারে সতর্কতা
ডিম ফ্রিজারে রাখা ঠিক নয়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ডিমের ভিতর পানি জমে বরফ হয়ে যেতে পারে এবং খোসা ফেটে যেতে পারে। ফলে ডিমের গুণগত মান নষ্ট হয়। শুধুমাত্র বিশেষভাবে ফ্রিজ করার জন্য প্রসেস করা ডিম (যেমন: তরল ডিমের মিশ্রণ) ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।