সারা বছর দেশে আলোচনার শীর্ষে ছিল জেনারেশন জি। তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কোন কিছুরই ঘাটতি ছিল না। তাদের শব্দচয়ন, কথাবার্তা, আচার-আচরণ এমকি তাদের সম্পর্ক চর্চার ধরণও ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। বছর জুড়ে সম্পর্কের নানান ধরণ নিয়ে এই লেখা-
হাইব্রিড ডেটিং
প্রেম মানেই নিয়মিত দেখা করা, হাতে হাত রেখে কথা বলা বা এক সঙ্গে কোথাও বসে সময় কাটানোর যে ধারণা সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে এই প্রজন্মের প্রেমিক-প্রেমিকেরা। তার বদলে বেছে নিচ্ছে হাইব্রিড ধারণা।
স্মার্ট ফোন হাতের নাগালে চলে আসার কারণে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে এসেছে। একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের একাধিক মাধ্যমও ইতোমধ্যে চলে এসেছে। তেমনি এক মাধ্যম ডেটিং অ্যাপ। আর ডেটিং অ্যাপ থেকে আরেক ধাপ উপরে আছে হাইব্রিড ডেটিং। হাইব্রিড ডেটিংয়ে প্রেমিক প্রেমিকার প্রেমের বড় একটা অংশই থাকবে স্ক্রিনবন্দী। তাদের সামনে বসে হাতে হাত রেখে কথা বলা বা গল্প করা সবই হয় ভিডিও কনফারেন্সে। হয়ত কখনও কখনও দেখা হয় তবে তার পরিমাণ খুবই কম। তবে হাইব্রিড ডেটিং মানে এই না যে শুধু ভিডিও কলে কথা বলা। প্রেম করার সময় প্রেমিক প্রেমিকারা যেভাবে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেখা করে তেমনি এখানেও হাইব্রিড ডেটিং এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। এখানেও পছন্দের মানুষকে সারপ্রাইজ দেওয়া হয়।
করোনার সময়ে সবাই যখন ঘরবন্দী, তখন প্রেমিক-প্রেমিকেরা বেছে নিয়েছিলেন এই হাইব্রিড ডেটিং। করোনার সেই গৃহবন্দী অবস্থা এখন আর না থাকলেও হাইব্রিড ডেটিংয়ের জনপ্রিয়তা হারায় নি।
সিচুয়েশনশিপ
সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দায়বদ্ধতা। তবে সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কের বৈশিষ্ট হলো দায়হীনতা। প্রচলিত জীবনযাত্রায় আমরা যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কে একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখি। কিন্তু এই সম্পর্কে পরিণতির দিকে যাওয়ার চেষ্টা বা কারো প্রতি কারো দায়বদ্ধ থাকার কিছু নেই। প্রাণভরে ভালোবাসার চেয়ে তাঁরা বর্তমানে থাকতে বেশি পছন্দ করেন।
দায়বদ্ধতা থাকে না মানে এই না যে দুজনের মধ্যে কোন ঘনিষ্ঠতা থাকে না। ঘনিষ্ঠতা থাকে, প্রেমিক-প্রেমিকার মতো সময়ও কাটান। তবে এই সম্পর্কে কোন নাম থাকে না। তবে দুজনের কারও মধ্যেই আজীবন টিকিয়ে রাখার মতো কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে না। আর নামহীন এই সম্পর্ক এই প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
স্যাপিওসেক্সুয়াল
একজন মানুষ আরেকজনকে দেখে প্রেমে পড়ে। আর এই দেখা মানে অনেক কিছু। কেউ আরেকজনের বাহ্যিক রূপ দেখে প্রেমে পড়ে। কেউ বা তার কথা শুনে প্রেমে পড়ে। তবে অনেকের কাছেই শারীরিক সৌন্দর্য ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে বুদ্ধিমত্তা। তাদের মস্তিষ্কে প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে। যে ব্যক্তি যত বেশি বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী, সে ব্যক্তির প্রতি তাদের মুগ্ধতা জন্মানোর প্রবণতাও তত বেশি। এ ধরনের মানুষদের বলা হয় স্যাপিওসেক্সুয়াল।
স্যাপিওসেক্সুয়ালদের ধরন দুই রকম। এদের এক ধরণ আছে যারা বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে আকর্ষণ বোধ করেন। আর অন্য যে ধরণের আছে তাদের মধ্যে যৌনতার চেয়ে মানুষটার সঙ্গে বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, রাজনীতি, দর্শন নিয়ে আলোচনা করতেই ভালোবাসেন।
টুইন ফ্লেম
টুইন ফ্লেম অনেকটা সোলমেটের মতো। তবে সব সোলমেট টুইন ফ্লেম নয়। এটি মূলত একটি আত্মিক সম্পর্ক। আলাদা আলাদা দুটি মানুষের চিন্তাভাবনা, আচার আচরণ, ব্যবহার ও কথার মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যায়। সোলমেট ও টুইন ফ্লেমের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো সোলমেটে কোন রোমান্টিক সম্পর্ক থাকে না তবে টুইন ফ্লেমে রোমান্টিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
এই সম্পর্কে অনেকটা আত্মিক সম্পর্কের মতো দুজন মানুষের মধ্যে অনেক মিল আছে। আর সম্পর্কের এই ধরণটিই পরবর্তীতে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এতে ফ্যান্টাসি, প্রত্যাশা থাকে অনেক বেশি।