বসন্তের পোশাকে ঐতিহ্য ও ট্রেন্ডের সংমিশ্রণ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
বসন্তের পোশাকে ঐতিহ্য ও ট্রেন্ডের সংমিশ্রণ
সূত্র: সংগৃহীত

বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম ঋতু বসন্ত। বসন্তের প্রথম দিন মানেই পয়লা ফাল্গুন। বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। এই ঋতুতে প্রকৃতির প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। সেই সঙ্গে বাঙালির হৃদয়েও নতুন উচ্ছ্বাসের সঞ্চার হয়। বাঙালীর পোশাক ও ফ্যাশনে লাগে ফাগুনের হাওয়া। বসন্ত ঋতুর মতোই ফ্যাশন জগতও রাঙিয়ে উঠে নতুন রূপে। পোশাকে ফুটে ওঠে রঙিন প্রাণ। এবারও বসন্তের ফ্যাশনে ফুটে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আধুনিক ফ্যাশনের সংমিশ্রণ।

রঙের বৈচিত্র্য

বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপন হবে। সেই দিনটিকে রঙিন করতে পোশাকেও রঙিন ছোয়া লেগেছে। পয়লা ফাল্গুন মানেই উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া। হলুদ এবং কমলা এই উৎসবের প্রধান রঙ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাল, ম্যাজেন্টা, সবুজ, গোলাপি, সাদা এবং ফিউশন শেডগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তবে বসন্তের প্রতীক হিসেবে হলুদ ও কমলা রঙের পোশাক সর্বাধিক প্রচলিত। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি বা কুর্তায় হলুদ ও কমলার বিভিন্ন শেডের মিশ্রণ দারুণ দেখায়। পোশাকে লাল ও গোলাপি রঙের ছোয়াও রয়েছে। কারণ ভালোবাসা দিবস এবং বসন্ত উৎসবকে একসঙ্গে উদযাপন করা হবে। তাই অনেকে লাল ও গোলাপি রঙের পোশাক বেছে নিতে পারছেন। শুধু তাই নয়, এই বছর সবুজ ও সাদা রঙের পোশাকও ট্রেন্ডে রয়েছে। প্রকৃতির সতেজতার প্রতীক হিসেবে সবুজ ও সাদা রঙের পোশাকের কালেকশনও দেখা যাচ্ছে বাজারজুড়ে।

বাংলার ঐতিহ্য

ফাগুনে পোশাকের ডিজাইনে রয়েছে বাংলার প্রকৃতি ও সংস্কৃতি। ফুলের নকশা, হালকা রঙের সমাহার, সুতি ও মসলিনের মতো প্রাকৃতিক সুতায় তৈরি পোশাকই পছন্দ সবার। পোশাকে পেস্টেল শেডগুলো বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তাঁত, জামদানি, মসলিন এবং সুতি কাপড় এবারও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। নারীরা হালকা সুতির শাড়ি, তাঁত, জামদানি ঘরানার শাড়ি বেছে নিচ্ছেন। যাতে থাকছে ফুলের নকশা।

বসন্তে নারীর পোশাক

বসন্ত উৎসবের নারীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো শাড়ি। কটন বা তাঁতের শাড়ি আরামদায়ক এবং ঐতিহ্যবাহী। হলুদ-কমলার ছাপা বা সূচিকর্মের তাঁতের শাড়ি এই দিনটির জন্য উপযুক্ত। সিল্ক ও মসলিন শাড়িও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। যারা জমকালো সাজ পছন্দ করেন, তারা মসলিন বা সিল্কের শাড়ি পরতে পারেন। আবারহালকা ও স্টাইলিশ অপশন হিসেবে বেছে নিতে পারেন অর্গানজা বা জর্জেট শাড়ি। শাড়ির পাশাপাশি আরামদায়ক কিছু পরতে চাইলে সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তি বেছে নিতে পারেন। আনারকলি বা ফ্রক স্টাইল কামিজ ফাল্গুনের সাজে রাজকীয় অনুভূতি দেয়। কামিজ বা কুর্তিতে পেপলামের ডিজাইন নতুন ট্রেন্ড। এছাড়াও মিরর ও এমব্রয়ডারি কাজের বসন্তের পোশাকও খুব জনপ্রিয়।

বসন্তে পুরুষের পোশাক

পাঞ্জাবি ও ফতুয়া পরতেই পুরুষরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ঐতিহ্যগতভাবেই পয়লা ফাল্গুনে হলুদ বা কমলা রঙের পাঞ্জাবি পরার প্রচলন রয়েছে। ফুলেল নকশা বা ব্লক প্রিন্টের পাঞ্জাবি এখনকার ফ্যাশন ট্রেন্ডে বেশ জনপ্রিয়। গরম আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে আরামদায়ক কটন বা লিনেনের পাঞ্জাবি পরতে পারেন। যারা পাঞ্জাবি পছন্দ করেন না, তারা ফিউশন স্টাইল হিসেবে ফ্লোরাল প্রিন্টের শার্ট বা ঢিলেঢালা কুর্তার সঙ্গে কটি পরতে পারেন।

শিশুদের পোশাক

শিশুদের পোশাকে আরামদায়ক উপকরণ থাকা জরুরি। মেয়ে শিশুদের জন্য ফ্রক বা ঘাগরা এবং ছেলে শিশুদের জন্য পাঞ্জাবি বা কুর্তা রয়েছে এবারের কালেকশনে। হলুদ ও কমলার পাশাপাশি বাহারি রঙের মিশ্রণ শিশুদের পোশাকে দেখতে ভালো লাগে।

অ্যাক্সেসরিজ ও সাজসজ্জা

নারীদের জন্য ফুলের মালা, টায়রা, চুড়ি ও কানের দুল ফাল্গুনের সাজে সৌন্দর্য এনে দেয়। বড় ঝুমকা বা চোকার যেকোনো ট্র্যাডিশনাল বা আধুনিক পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। বিন্দি ও ন্যাচারাল মেকআপই বসন্তের সাজে প্রাণ দেবে। লাল বা কমলা টিপের সঙ্গে হালকা মেকআপ ফাল্গুনের সাজের পরিপূর্ণতা দেয়।

ট্রেন্ডের সঙ্গে বসন্তের স্টাইল

ফ্যাশন ডিজাইনাররা বসন্তের ফ্যাশনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন। আধুনিক ট্রেন্ডের সঙ্গে বসন্তের ফিউশন হিসেবে স্কার্ট ও টপ বেশ জনপ্রিয়। ফ্লোরাল প্রিন্টের লং স্কার্টের সঙ্গে কটন বা সিল্কি টপ ফাল্গুনের পোশাক হিসেবে বেশ মানানসই। ফিউশন ওয়্যার, যেমন ক্রপ টপের সঙ্গে শাড়ির স্কার্ট বা এমব্রয়ডারি করা লিনেন জ্যাকেট এখন বেশ জনপ্রিয়। পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনের প্রতি ঝুঁকেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। অর্গানিক সুতি, প্রাকৃতিক রং এবং হস্তশিল্পের ছোঁয়া রয়েছে পোশাকে। বসন্তের ফ্যাশনে স্টেটমেন্ট জুয়েলারি, পাটের ব্যাগও পাওয়া যাচ্ছে। কাপড়ের প্রিন্টেও রয়েছে নতুনত্ব। সুতি  কাপড়ে দেখা যাচ্ছে রিকশা, চায়ের কাপ, ক্যাকটাস, পুতুল, সিএনজি, বিখ্যাত ছবিসহ বিভিন্ন স্লোগান।

Link copied!