• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩০, ১৫ শা'বান ১৪৪৬

বসন্তের রঙে রঙিন প্রকৃতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
বসন্তের রঙে রঙিন প্রকৃতি
ছবি: সংগৃহীত

শীতের কুয়াশা সরিয়ে, প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে বসন্তের মিষ্টি হাওয়া। ফাল্গুনের প্রথম দিন থেকেই প্রকৃতির রং বদলে যায়, গাছে গাছে নতুন পাতা আর বাহারি ফুলের সমারোহে চারপাশ সেজে ওঠে অপূর্ব সাজে। বাতাসে ভেসে আসে মিষ্টি গন্ধ, পাখির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আনন্দের সুর। বসন্ত শুধু ঋতু নয়, এটি প্রাণের উচ্ছ্বাস, ভালোবাসার বার্তা আর নতুন করে জেগে ওঠার প্রতীক।

বসন্তের আগমনী বার্তা
শীতের জড়তা কাটিয়ে বসন্ত আসে নবজীবনের বার্তা নিয়ে। ফাগুনের প্রথম দিন থেকেই গাছের শুকনো ডালগুলোয় জন্ম নেয় নতুন কুঁড়ি, আম্রকাননে ফুটে ওঠে মুকুলের মিষ্টি সুবাস। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ আভা ছড়িয়ে দেয় রঙের উচ্ছ্বাস, আর কোকিলের ডাক জানান দেয় বসন্তের আগমন। প্রকৃতি যেন এক নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে।

বসন্ত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটি মানুষের মনেও আনন্দের সঞ্চার করে। রুক্ষতা দূর হয়ে প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরও কোমল, আরও স্নিগ্ধ। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই বসন্তের আবহ ছড়িয়ে পড়ে, উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ।

প্রকৃতির রঙের খেলা
বসন্ত মানেই রঙের ছোঁয়া। গাছের ডালে নতুন সবুজ পাতা, ফুলে ফুলে বর্ণিল সাজ, আর খোলা আকাশের নিচে বসন্তের মৃদু বাতাস—সব মিলিয়ে প্রকৃতিতে তৈরি হয় এক অনন্য রঙের মেলা।

পলাশের লাল আগুনের শিখার মতো জ্বলজ্বল করে। শিমুল ফুলের টকটকে রঙ বসন্তকে করে আরও উজ্জ্বল। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য রঙিন করে তোলে পথের ধারে ধারে। মাধবী, বকুল, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ—সব মিলিয়ে বসন্ত হয় সুগন্ধে ভরা এক আনন্দময় ঋতু।

শুধু ফুল নয়, বসন্তের বাতাসও যেন অন্য রকম হয়ে ওঠে। হালকা গরম আর ঠান্ডার মিশেলে বাতাস হয় মিষ্টি, যা হৃদয়ে জাগায় নতুন অনুভূতি।

বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসার দিন
বাংলা সংস্কৃতিতে বসন্ত মানেই উৎসবের আবহ। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ‍‍`পহেলা ফাল্গুন‍‍` উদযাপন করা হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসন্ত বরণ উৎসব পালন করা হয়। ফুলেল সাজ, হলুদ-কমলা রঙের পোশাকে তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠেন বসন্তের আনন্দে।

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস আসে একইসঙ্গে। বসন্তের প্রেমময় আবহে এই দিনটি হয়ে ওঠে আরও বিশেষ। ভালোবাসার মানুষকে ফুল, উপহার, আর আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ করা হয়। বসন্ত তাই শুধু প্রকৃতির নয়, এটি হৃদয়েরও এক বিশেষ ঋতু।

বসন্তের গান ও কবিতা
বসন্ত নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য গান, কবিতা ও গল্প লেখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বসন্ত এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

বাংলার লোকসংস্কৃতি বাউল গান, পালাগান, ও কবিগানেও বসন্তের বন্দনা শোনা যায়।

বসন্তে প্রকৃতির পরিবর্তন
বসন্ত কেবল আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না, এটি আবহাওয়ার পরিবর্তনেরও সূচনা করে। শীতের বিদায়ের পর ধীরে ধীরে উষ্ণতা বাড়তে থাকে। দিন দীর্ঘ হয়, রাত ছোট হয়। কৃষিজীবীদের জন্য বসন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এই সময় ধানের শীষে মুকুল ধরে, মাঠের ফসল পেকে ওঠে, এবং কৃষকরা নতুন স্বপ্ন দেখে।

তবে বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হয়, তাই এই সময় জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়েও সচেতন থাকা দরকার।
বসন্ত কেবল প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটি মানুষের জীবনেও নতুন বার্তা আনে। নতুন করে জেগে ওঠার শিক্ষা দেয়, আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের উপলব্ধি বাড়ায়, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার তাগিদ দেয়, 
ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে।  বসন্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি শীতের পর বসন্ত আসে, প্রতিটি দুঃখের পর সুখ আসে, এবং প্রতিটি কঠিন সময়ের পর নতুন আশার আলো জাগে।
বসন্ত মানেই নতুনের আহ্বান, রঙের খেলা, ভালোবাসার উচ্ছ্বাস। প্রকৃতি নতুন রূপ ধারণ করে, মানুষও নতুন উদ্যমে পথ চলতে শিখে। পাখির কণ্ঠে, বাতাসের স্নিগ্ধতায়, আর হৃদয়ের গভীরে বসন্তের ছোঁয়া থাকে চিরকাল। তাই, বসন্ত যখন আসে, তখন কেবল প্রকৃতি নয়, আমাদের মনও আনন্দে ভরে ওঠে।

Link copied!