দ্বিতীয় সেরা বাণিজ্যশিল্প কফি খুব দ্রুতই সবার মন জয় করে নেয়। স্বাদ, গন্ধ এবং উপকারিতার কারণে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। এর বীজ বিশ্বের সত্তরটিরও বেশি দেশে উৎপাদিত হয়। এই কফির প্রথম উৎপত্তি হয় মধ্যপ্রাচ্যে।
মধ্যপ্রাচ্যে আবিষ্কৃত হলেও খুব দ্রুত ইউরোপে পৌঁছে যায় কফি। ১৬১৫ সালের দিকে ইউরোপ থেকে ভ্রমণকারী এবং ব্যবসায়ী যারা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিল, তাদের হাত ধরেই ইউরোপে প্রবেশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ’কাবেহ খানাহ’। ততোদিনে মধ্যপ্রাচ্যে এই কফি কাবেহ খানাহ নামেই বেশি পরিচিতি পেতে শুরু করে। এভাবেই কফি ইউরোপে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। আর সমস্যা বাধে তখনই। কারণ ইউরোপেও ততদিনে কফি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তখন ইউরোপের কট্টর ক্যাথলিকেরা একটু সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। যে জিনিস মুসলিমদের হাতে তৈরি সেই জিনিস ইউরোপের খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত পবিত্র পানীয় রেড ওয়াইনের জায়গা দখল করে নিচ্ছিল। তাই কট্টর ক্যাথলিকেরা একে ‘শয়তানের তিক্ত আবিষ্কার’ বলে ডাকতো। ফলে তারা তখন ইউরোপে কফি পানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। যেকোনো অনুষ্ঠানে এর ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। যদিও এই ক্যাথলিকরা তখনও কফির স্বাদ নেন নি।
কিন্তু এর তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে ঠেকিয়ে রাখা যায় নি। এই নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ লেগে গেলে এগিয়ে আসেন তৎকালীন পোপ অষ্টম ক্লিমেন্ট। তখন তিনি কফির স্বাদ নেন এবং মুগ্ধ হয়ে যান। ঘোষণা দেন, কফি কেবল মুসলমানদের একার নয়, খ্রিস্টানদেরও পানীয়! পান করা শেষে তার বক্তব্য ছিল,
“’শয়তানের পানীয়’ তো দেখছি দারুণ সুস্বাদু। আমাদের উচিত এটা দিয়ে ব্যাপটাইজ করা, তাহলে স্বয়ং শয়তানকেই ধোঁকা দেয়া যাবে!”
তাহলে কীভাবে এলো এই শয়তানে পানীয়
কফি উৎপত্তি কীভাবে সেটা স্পষ্ট ভাবে বলা না গেলেও এটা জানা যায়, কফির আবিষ্কার হয় মুসলমানদের হাত দিয়ে নবম শতকে। আরব-ইথিওপিয়ানের আবিসিনিয়ার মঠের নিকটবর্তী এক পার্বত্যাঞ্চলে কাফফা শহরের ক্যালডি নামক এক পশুপালক তার ছাগলগুলোকে চরাচ্ছিল। ছাগলগুলো খুব ক্লান্ত হয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল, ছাগলগুলোর ক্লান্তিভাব দূর হয়ে গেছে। উদ্যমতা ও চঞ্চলতায় ভরে ওঠেছে শরীর-মন। ক্যালডির কাছে এই ব্যাপারটা অদ্ভুত আর বেখাপ্পা লাগে।
ক্যালডি অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে লক্ষ্য করলেন, চেরি ফলের মতো কিছু একটা খাচ্ছে ছাগলগুলো। অনেক ভাবনার পর, উজ্জ্বল সেই ছোট ছোট ফলগুলোর স্বাদ নিজেকে নিতে রাজি করায় ক্যালডি। আর ঠিক একইরকমের উত্তেজনা আর চাঙ্গা ভাবটা তার নিজেরও অনুভূত হয়।
এরপর দ্রুত হাজির হলেন মঠের এক সন্নাসীর কাছে। বিষয়টি জানার পর মঠের একজন সন্ন্যাসী সেই লাল রঙের ফলগুলোকে “শয়তানের কর্মকান্ড” বলে আখ্যায়িত করে। এবং তৎক্ষণাৎ আগুনের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সেই অদ্ভুত বীজগুলোকে। সেই ছোট্ট লাল ফলগুলো ঝলসে যায় আগুনের তাপে। তবে ফলগুলো থেকে উৎপন্ন ধোঁয়ায় অদ্ভুত এক সুগন্ধি চারদিকে ছড়াতে থাকে, যা সেই সন্ন্যাসীর নজর কাড়ে। দ্রুতই সন্ন্যাসীর আদেশে সেই ফলগুলোকে জ্বলন্ত আগুন থেকে উঠিয়ে আনা হয় এবং সেগুলোকে গরম জলের একটা কলসিতে সংরক্ষণ করা হয়।
অনেকে আবার বলেন, ইয়েমেনের এক সুফি সাধক ঘোতুল আব্দুল নুরুদ্দীন আবুল আল-হাসান আল-সাদিলি কফির আবিষ্কারক। তিনি একদিন সুন্দর একটি পাখিকে অজানা লাল রঙের একটি ফল খেতে দেখে কৌতুহলী হয়ে নিজেও চেখে দেখেন সেটাকে। তারপর তাতে তিনি খুব সতেজ অনুভব করেন।
তবে কফি যেভাবেই আবিষ্কার হয় না কেন এর স্বাদ অতুলনীয় এবং উপকারীও। কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। এগুলো আমাদের দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে। তাই দিনে একটি নির্দিষ্ট পরিমানে কফি পান করা স্বাস্থ্যকর।