রমজান মাসে রোজা শেষে ঈদ পালন করবেন মুসলিমরা। ঈদের আনন্দ প্রত্যেক মুসলিমদের কাছে অনেক বেশি। মাত্র কয়েকটি রোজা বাকী। এরপরই ঈদ আনন্দ। ঈদের প্রস্তুতি এখনই শুরু হয়ে গেছে। কেনাকাটাও চলছে ধুমগতিতে। ছোট বড় সবাই এখন মার্কেটে ভিড় করছে। নতুন পোশাকে ঈদ পালনের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে প্রতিবছরই ভিন্ন আয়োজন করে পোশাক ডিজাইনাররা। দেশিয়, বিদেশি সব পোশাকেই থাকে নতুনত্ব। এর মধ্যে ফ্যাশনের তুঙ্গে থাকে কয়েকটি ডিজাইন বা পোশাক। এবারও ব্যতিক্রম নয়। ঈদ ফ্যাশনে এবার মেয়েদের পোশাকে জায়গা করে নিয়েছে বাটিক প্রিন্ট।
ফ্যাশনে বাটিক প্রিন্টের জুড়ি নেই। তরুণ থেকে বয়স্ক সবারকাছেই এর গ্রহণযোগ্যতা সারাবছরই থাকে। তবে এবার ঈদকে ঘিরে বাটিক প্রিন্টের পোশাকের উপরই ঝুঁকছেন ক্রেতারা। বড়দের পোশাকে বাটিক প্রিন্ট তো রয়েছেই, বাদ পড়েনি ছোটরাও। আড়ংসহ দেশিয় ব্র্যান্ডের দোকানে দেখা যায় বাটিক প্রিন্টের ডিজাইনে করা নানা পোশাক। বাহারি রঙের ছড়াছড়ি বাটিক প্রিন্টের এসব ডিজাইন করা হয়েছে সব বয়সীদের জন্যেই।
ঈদ বাজার ঘুরে দেখা যাবে, মেয়েদের পোশাকে বাটিক প্রিন্টের সেলোয়ার কামিজ, শাড়ি, কাপ্তান, কো-অডস, স্কার্ট, ফতুয়া, শার্ট, ওড়না, হিজাবসহ বিভিন্ন ডিজাইন করা পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। আর ছোটদের জন্য় বাটিক প্রিন্টের স্কার্ট, সেলোয়ার কামিজ বেশ পছন্দ করছে ক্রেতারা। ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়াও বাটিকের ছোঁয়া। বাটিক প্রিন্টের শাড়ি শুধু ঈদেই নয়, বৈশাখকে কেন্দ্র করেও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। বাটিক প্রিন্টের কামিজের নেকে স্টোন কারুকাজ করা পোশাকও এখন বেশ ট্রেন্ডে চলছে। বাটিকের পোশাক দেখতে যেমন ফ্যাশনেবল। তেমনি আরামদায়কও বটে।
বাটিকের শাড়ি মেয়েরা অফিসে পরেও যেতে পারবেন। আবার যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠানেও বাটিকের শাড়ি পরে দিব্যি ঘুরে আসতে পারবেন। বিশেষ করে বাটিক প্রিন্টের সিল্কের শাড়িতে রয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য। বাটিক সাধারণ সুতি কাপড়েই বেশি হয়। তবে বাটিক প্রিন্ট সিল্ক, গরদ, তসর, মসলিন, অ্যান্ডিকটন এবং খাদি কাপড়েও করা হয়। তাই এটি যেমন আরামদায়ক, তেমরি ফ্যাশনেবলও।
মেয়েরা শাড়ির পাশাপাশি বাটিকের সালোয়ার-কামিজও পরছেন। কামিজের ক্ষেত্রে বাটিকের অনবদ্য কাজ পোশাকে এনে দেয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া। বাটিকের কামিজ বা ফতুয়ার সঙ্গে জিন্স, লেংগিস বা জেংগিস বেশ মানায়।
বাটিক প্রিন্টের স্কার্টও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্কার্টের সঙ্গে বাটিক প্রিন্টের কিংবা একরঙা টপস পরছে মেয়েরা। বাটিক প্রিন্টের ওড়নাও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ছেলেদের পোশাকে বাটিক প্রিন্টের পাঞ্জাবি যেকোনো উৎসবের জন্য মানানসই। সঙ্গীর বাটিক শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে একই রং বা ডিজাইনের পাঞ্জাবি এখন ট্রেন্ডে চলছে। বাটিক প্রিন্টের শার্ট এবং ফতুয়াও বেশ চাহিদায় রয়েছে। ক্যাজুয়াল বা সেমি-ক্যাজুয়াল পোশাকে বাটিক প্রিন্টের হাওয়াই শার্টও ট্রেন্ডে চলছে।
ফ্যাশন ট্রেন্ডে কয়েকবছর পরপরই আসে বাটিক প্রিন্টের পোশাক। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় থাকা এই বাটিক প্রিন্টের পেছনের কথা কী জানেন? কীভাবে বাটিক প্রিন্ট এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো?
দেশীয় ঐতিহ্য হলেও বাটিকের জন্ম ইন্দোনেশিয়ার জাভা বালিতে। সেখানে দুই হাজার বছর আগে এর প্রথম শুরু। ‘জাভানিজ শব্দ ‘অম্বাটিক’ থেকে এসেছে এটি। যার অর্থ ‘বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করা’।
বিশ্বজুড়ে শিল্প ও নৈপুণ্যের অনেক পদ্ধতি বহু শতাব্দী ধরে আবিষ্কার এবং অনুশীলন করা হয়। বিশ্বায়নের যুগে নতুন নতুন সৃজনশীল শিল্পে জড়িয়ে গেলেও ফ্যাশনে সেই আগের জিনিসগুলোকে নতুনত্ব দেয়। বাটিক তেমনই এক শিল্প।
ঘরে ঘরে কাপড়ে বাটিক প্রিন্ট করার প্রচলন ছিল এক সময়। কাপড়ের কিছু অংশে নকশা এঁকে তারপর নকশাটি মোম দিয়ে ঢেকে তা রঙে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। মোম লাগানো অংশে রং ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে না। আর বাকি অংশ রঙিন হয়ে যায়। এভাবেই করা হয় বাটিক প্রিন্ট।
বাটিক প্রিন্টের মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। বলা যায়, দেশিয় ফ্যাশনে কয়েক ধরণের বাটিকে চল রয়েছে। একেক ধরণের বাটিক করার পদ্ধতি একেক রকম। যেমন_ রিটেন বাটিক, স্ট্যাম্পড বাটিক, পেইন্টিং বাটিক।
কোথায় পাবেন?
পছন্দসই ও রুচি অনুযায়ী ডিজাইনের বাটিক প্রিন্টের পোশাক কিনতে এখন যেকোনো মার্কেটেই যেতে পারেন। ঈদ উপলক্ষে সব মার্কেটেই এখন বাটিক কালেকশন পাওয়া যাবে। তবে অন্যদের থেকে ভিন্ন ডিজাইন পেতে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে আসতে পারেন। আড়ং থেকে শুরু করে দেশী দশ, দেশাল, নবরূপা, চরকা, সোর্স, আরণ্যক, প্রবর্তনা, যাত্রা, নোঙরসয় প্রায় অধিকাংশ দেশিয় ফ্যাশন হাউজে ঈদ আয়োজনে রয়েছে বাটিক প্রিন্ট। এছাড়াও সাধ্যের মধ্যে কিনতে গাউসিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট ঘুরে আসতে পারেন। তবে অনলাইন শপিংয়েও এখন বাটিক প্রিন্টের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক কেনা যাচ্ছে।