পরীক্ষায় পাস নম্বর পেয়ে নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হয় শিক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষা ছাড়াও নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। সেই পদ্ধতির নামই হচ্ছে অটোপাস। এটি শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি থেকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার পদ্ধতি, যেখানে প্রয়োজনীয় নম্বর পাওয়ার শর্ত থাকে না। অটোপাস ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে মানসিক চাপ কমানোর লক্ষ্যে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অটোপাসে শিক্ষার্থীদের নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে। কিন্তু এতে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা বেড়ে যায় না কমে যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানান, অটোপাস ব্যবস্থার কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। যেমন_
মানসিক চাপ কমানো
পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ছোট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই চাপ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শেখার আগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অটোপাস ব্যবস্থায় পরীক্ষার সেই মানসিক চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব হয়।
শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে
কখনও কখনও বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে অটোপাস ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যায়। যা শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সমতা প্রতিষ্ঠা
সব শিক্ষার্থীর শেখার ক্ষমতা এক রকম নয়। কিছু শিক্ষার্থী অন্যদের তুলনায় শেখার ক্ষমতা দুর্বল হয়। শিখতে কিছুটা বেশি সময় নেয়। অটোপাস ব্যবস্থায় সবাইকে একইভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং সবাইকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতা আনতে সাহায্য করে।
শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার ভয় অনেক শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। অটোপাস ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তারা অটোপাসকে সুযোগ হিসেবে নেয় এবং আরও ভালোভাবে শিখে নিজেদের উন্নত করার চেষ্টা করে।
অটোপাস ব্যবস্থায় ইতিবাচক দিকের সঙ্গে কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অটোপাস ব্যবস্থার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। বিশেষ করে এই ব্যবস্থা শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া আরও কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন_
শিক্ষার মান হ্রাস
অটোপাস ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নিজেদের মূল্যায়নের সুযোগ পায় না। যা শিক্ষার মান হ্রাস করতে পারে। অন্যদিকে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জ্ঞান এবং দক্ষতার একটি মূল্যায়ন পায়। যা অটোপাস ব্যবস্থায় অনুপস্থিত।
আগ্রহ কমে যাওয়া
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চাপ না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারাতে পারে। পড়াশোনা না করেও পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারে বলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীরা উদাসীন হয়ে উঠে।
দক্ষতার অভাব
পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতা অর্জন করে। অটোপাস ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা এই দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। যা তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনে সমস্যা করে।
প্রতিযোগিতার মনোভাব কমে যাওয়া
পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়। যা তাদের আরও ভালো করার জন্য উদ্দীপ্ত করে। অটোপাস ব্যবস্থা এই প্রতিযোগিতার মনোভাবকে হ্রাস করে এবং শিক্ষার্থীদের উন্নতির সুযোগ কমিয়ে দেয়।
ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টি
অটোপাস ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়, তবে তাদের প্রাথমিক শ্রেণির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শেখা হয়ে ওঠে না। এতে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা বা কর্মজীবনে তারা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাই অটোপাস ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানোর এবং শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাতে শিক্ষার মান বা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের উপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার আগ্রহ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।