সন্তানকে বড় করা বাবা মায়ের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে সন্তানকে সুপথে চালানো এবং সব রকম চাহিদা পূরণ করার দায়িত্বও বাবা মায়ের। সুন্দর পরিবেশে লালন-পালন করা, কোনো নির্যাতন না করা এবং খারাপ পথে না যাওয়াসহ সব বিষয়েই খেয়াল রাখতে হয়। ইসলাম ধর্মে সন্তানকে যথাযথ লালন পালন ও সুশিক্ষা দেওয়ার কথা বলা রয়েছে।
সাধারণত সন্তান ছোট বেলা থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গেই ঘুমায়। আদরের সন্তানকে বুকে আগলে রাখতে চান প্রতিটি বাবা-মা। অনেক সময় দেখা যায় ৭-৮ বছর বয়সেও শিশুদেরকে সঙ্গে নিয়ে এক বিছানায় থাকছেন। কিন্তু একটা বয়সের পর সন্তানকে পৃথক বিছানা দিতে হয়। এই বিষয়ে ইসলাম ধর্মেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্তান বড় হলে তাকে অবশ্যই বাবা মা থেকে পৃথক হয়ে আলাদা বিছানায় ঘুমাতে হবে।
মহান নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। আমর ইবনে শোয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে নামাজ শিক্ষা দাও, দশ বছর বয়স হলে নামাজের জন্য তাদেরকে প্রহার কর আর তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫)
এ হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে নবিজির নির্দেশনা অনুযায়ী দশ বছর বয়স থেকে সন্তানদের বিছানা পৃথক করে দেওয়া ওয়াজিব। কারণ এই বয়সের পর মেয়েরা বাবার সঙ্গে এবং ছেলেরা মায়ের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে পারবে না। আবার সবাই মিলে এক বিছানায় ঘুমানোও নিষিদ্ধ। তবে মা চাইলে মেয়ের সঙ্গে আলাদা বিছানা ঘুমাতে পারবে। আবার বাবা তার ছেলের সঙ্গেও পৃথক বিছানায় ঘুমাতে পারবে।
তবে এক্ষেত্রে অধিক সন্তানদের জন্য় পৃথক বিছানা বা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং একই ঘরে ভিন্ন বিছানার ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যদি পৃথক বিছানা করার সুযোগ বা পরিস্থিতি না থাকে তবে যথাযথ দূরত্ব রেখে ঘুমাতে হবে। এক্ষেত্রে বালিশ বা অন্য কিছু মাঝে রেখে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তবে এটা ছেলে সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে মেয়েদের বিছানা বাবা ও ছেলেদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখতে হবে। বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে দূরত্ব নিশ্চিত করলে হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৮২)
এদিকে নরওয়ে ইউনিভার্সিটি অব বারগেনের মনোবিশেষজ্ঞ ডা. মারি হাইসিং জানান, শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমালে তাদের রাতে ঘুম কম হওয়া এবং মাঝে মাঝেই জেগে ওঠার প্রবণতা থাকে। এক-তৃতীয়াংশ শিশুর মধ্যে এমন দেখা গেছে। যাদের ছয় মাস বয়স থেকে রাতে বারবার জেগে যাওয়ার অভ্যাস ছিল এবং ১৮ মাস বয়সেও তা থেকে গেছে। তাই দুই বছর বয়সের আগেই সন্তানকে পৃথক বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এই অভ্যাস তৈরি করতে বাবা মাকে বেশ ঝক্কি ঝামেলাও পোহাতে হয়। এর জন্য যা করা যাবে_
• প্রথমে নিজেদের ঘরেই সন্তানের জন্য আলাদা বিছানা করে দিন। ৪ বছর বয়স হলে আলাদা ঘর দিতে পারেন।
• সন্তানের ঘরকে রঙিন করে সাজাতে হবে। ঘরগুলোতে নানা রঙের আসবাবপত্র থাকবে।
• সন্তানের পছন্দের খেলনা সেই ঘরে রাখুন। তার পড়ার জায়গা করে দিন।
• সন্তানের বিছানার উচ্চতা একটু নিচু রাখুন। যেন সন্তান ঘুমের মধ্যে পরে না যায়। রাতে মৃদু আলোর ব্যবস্থা রাখুন।
• সন্তানের ঘর আপনাদের ঘরের পাশেই রাখুন। সন্তানকে ঘুম পারিয়ে এরপর নিজে ঘুমাতে যান। এক্ষেত্রে আপনার ঘরের দরজা খোলাই রাখুন।